লুই ভুটন – The Dark History of Louis Vuitton
৫৪ লক্ষ ১১ হাজার ৬৩৫ টাকার ট্রিবিউট প্যাচওয়ার্ক ব্যাগ( Louis Vuitton Tribute Collectors Patchwork Bag)
১০ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৫৮ টাকার Coquille D’ Oeuf Minaudière হ্যান্ড ব্যাগ;
কুমির ও অজগরের চামড়ার তৈরীর বেল্ট ও ওয়ালেটসহ নানা ধরণের বিলাসবহুল পণ্যের ব্র্যান্ড লুই ভিটন।
যাদের বিরুদ্ধে, ১৯৩১ সালে কৃষ্ণাঙ্গ -দের খাঁচায় আটকে রেখে Paris Colonial Exhibition-এ প্রদর্শণ করানোর অভিযোগ আসে। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই বির্তকিত ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল ব্র্যান্ডকে দাঁড় করিয়েছে এক ১৩ বছরের যুবক যে তার সৎ মায়ের অত্যাচার থেকে বাঁচতে হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে ২৪৮ মাইলের পথ পায়ে হেঁটেই রওনা দেয় প্যারিসের উদ্দেশে?
২০১৪ সালে একজন সামাজিক মাধ্যম ব্যাবহারকারি এই পোস্ট করেছিলেন যে ১৯ থেকে ২০ শতাব্দীর মধ্যে লুই ভিটন (Louis Vuitton) তার শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান ক্রেতাদের বিনোদন দেওয়ার জন্য Human Zoo অর্থাৎ কৃষ্ণাঙ্গদের সার্কাসের প্রানীর মতো খাঁচায় বন্দী রেখে চিড়িয়াখানার মতো প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল। লেখাটি সে সময় মানুষের নজরে খুব একটা আলোচনায় না এলেও ২০২১ সালে এসে হঠাৎ এই লেখাটি ভাইরাল হয়ে যায় এবং নামী দামী সব সেলিব্রেটিরা এটিকে রি-পোস্ট করতে থাকে।
এরই মধ্যে লুই ভিটনের (Louis Vuitton) বিরুদ্ধে আরো একটি অভিযোগ আসে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লুই ভিটন-ই একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল যারা বিপুল পরিমান অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছিল।
কিন্তু কিভাবে?
লুই ভিটনের (Louis Vuitton) প্রতিষ্ঠার দেড়শো বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল লুই ভিটনের নাতি গ্যাস্টন ভিটন (Gaston-Louis Vuitton) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিজের প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে নাৎসি বাহিনির সাথে হাত মিলিয়েছিল। বিনিময়ে লুই ভিটনকে বিশ্বের সব থেকে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার বিনিময়ে নাৎসি বাহিনির জন্য ল্যাগেজ ব্যাগ তৈরী করতে হয়েছিল। একদিকে যেমন নাৎসি বাহিনীরা অন্যান্য সব ব্র্যান্ড বন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু এদিকে লুই ভিটনের শো-রুম তখনো ঠিকই খোলা ছিল। এক বইয়ে এটাও খোলাসা করা হয়েছে যে হোটেল ডু পার্কের যে বিল্ডিং-এ লুই ভিটনের শো-রুম ছিল সেই একই বিল্ডিং-এ Anti Jewish France Government-এর গোপন অফিসও ছিল। বইটির জন্য গবেষণা করার সময়, লেখক স্টেফানি বনভিসিনিকে জানানো হয়েছিল প্রতিষ্ঠানের ১৯৩০ – ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সমস্ত দলিল ধ্বংশ করে ফেলা হয়েছে।
এতগুলো বির্তকিত বিষয় ছাড়াও আরো কিছু অদ্ভুত ব্যাপার আছে যার জন্য লুই ভিটন infamously famous। যেমনঃ বিশ্বাস করা কঠিন কিন্তু তাদের প্রতিটি হ্যান্ড ব্যাগকে ৫ হাজার বার খোলা এবং বন্ধ করা হয় শুধুমাত্র জিপার ঠিক মতো কাজ করে কিনা তা যাচাই করার জন্য। দেড় ফুট উচ্চতা থেকে ৮ পাউন্ড ওজনসহ টানা ৪দিন যাবত নিচে ছুড়ে ফেলা হয় ব্যাগটি কেমন টেকসই এটা যাচাই করার জন্য। তাদের প্রতিটি পণ্য অতি বেগুনী রশ্মীর সামনে ধরে রাখা হয়, রঙ ফিকে হচ্ছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য।
লুই ভিটনের ব্যাগগুলো বানানোর প্রক্রিয়া এতটাই উচ্চ পর্যায়ের যে ২০-৩০ জন কারিগর পুরো ৮দিন একাধারে কাজ করে একেকটা ব্যাগ তৈরি করে থাকে। তাই শুধুমাত্র হাতের স্পর্শ এবং নীবির যত্নে তৈরী হয় তাদের প্রতিটি পণ্য, যেখানে সেলাই মেশিন ছাড়া আর কোনো বড় যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। এই সময়ে এত বিস্তৃত উৎপাদন প্রক্রিয়া বজায় রাখা কোনো ছোটখাট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব না। লুই ভিটন একাই এখন ৫০০ বিলিয়ন ডলার মার্কেট ক্যাপিটালের একটি Luxury Brand.
কিন্তু এসব কিছুই শুরু হয়েছে এমন একজন মানুষের হাত ধরে যার কাছে একসময় খাওয়া-পরার টাকা পর্যন্ত ছিল না।
ঘটনা শুরু হয় ১৮৩৫ সালে এক কৃষকের ঘরে জন্ম নেওয়া ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরের হাত ধরে; যে তার সৎ মায়ের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মধ্য রাতে বাড়ি ছেড়ে হাঁটতে শুরু করে এবং ততক্ষন পর্যন্ত সে হেটে যায় যতক্ষণ না সে হাঁটতে হাঁটতে ২৪৮ মাইল দুরে তার গন্তব্য প্যারিসে গিয়ে পৌছায়। এই দীর্ঘ যাত্রায় তার পুরো ২ বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু পুরো যাত্রায় লুই-র এটাই চেস্টা থাকে সে যেন কোন না কোন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে। কখনো রান্নাঘরের সহকারি, কখনো বা ওয়েটার হিসেবে কাজ করেছেন দু বেলা খাবার আর কাপরের বিনিময়ে। বেশীরভাগ সময় তাকে ঘুমাতে হয়েছে খোলা আকাশের নীচে, এমন কি জঙ্গলেও!।
নিজের এই অভিজ্ঞতা নিয়ে যখন লুই প্যারিসে (Paris) পৌছালো তখন প্যারিসে শিল্প বিপ্লব চলছিল। সে খেয়াল করলো ট্রেনে যাতায়াত দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসব দেখে সে সাথে সাথে ধনী ও অভিজাত শ্রেনীর জন্য একজন প্রফেশনাল লাগেজ প্যাকার হিসেবে কাজ করা শুরু করলো। হ্যা, সেই সময় লাগেজ প্যাক করাও একটা পেশা ছিল। কারণ তখন প্যারিসের মহিলারা এত ভারী পোষাক পরতেন যে সব কিছু প্যাক করতে ৫০-৬০টি লাগেজ ট্রাংকও লেগে যেত। এখানে কাজ করতে গিয়ে সে খেয়াল করলো মার্কেটে লাগেজের ব্যবসাও খুব ভালো চলছে। লুই-র মনে হল এই ব্যবসা সামনের দিনে গিয়ে আরো ভালো হবে।
তাই সে একজন দক্ষ কারিগরের কারখানায় কাজ নিল এবং ব্যাগ বানানোর কাজ শেখা শুরু করলো। শেখার সময় লুই এই লাগেজ ব্যাগগুলোকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো। আর তারপরই সে আবিষ্কার করলো মার্কেটে ব্যাগগুলোতে একটি বড় সমস্যা রয়েছে।
ঐ সময়ে মার্কেটে কাঠ আর লোহার মতো ভারী উপকরণ দিয়ে ট্রাঙ্কের ফ্রেম বানানো হতো যা আকৃতিতেও খুব একটা সুবিধাজনক ছিল না। এই সমস্যাকে সমাধান করতে গিয়ে লুই নিজেই একটা কারখানা দিল এবং এক নতুন ধরণের ট্রাংক বানানো শুরু করলো যা এ সমস্যাটির সমাধান করতে পারে। লুই সবার আগে কাঠ ও চামড়ার পরিবর্তে ক্যানভাস ব্যবহার করে ট্র্যাংক-কে আঁটশাট ও টেকশই বানালো। এটার আকৃতিও সে চতুর্ভুজ রাখলো যেন অনেকগুলো ব্যাগ একসাথে একটার উপর একটা রেখে প্যাক করা যায়। এই নতুন কনসেপ্ট বা ইনোভেশন এতটাই Game changing ছিল যে শুনতে সাদাসিধা মনে হলেও ঐ সময়ের ট্রামিং ইন্ডাস্ট্রিতে এটি বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছিল।
এটা সে সময়ের কথা যখন যুদ্ধ ও রাজনীতির কারণে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করছিল। যখন একদিকে লুই কৌশলে তার ট্রাংক বাজারে এনে একটি সফল ব্যবসা শুরু করছিল তখন অন্যদিকে প্যারিসের অনেক পরিবার আর্থিক ক্ষতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় সে বিভিন্ন ধরনের বক্স এবং ট্রাঙ্ক বানানো শুরু করলেন। তার বানানো বক্সগুলো এতটাই নিখুত ছিল যেনেপোলিয়ন থার্ড (Napoleon III) এর স্ত্রী ফ্রান্সের সম্রাজ্ঞী ইউজিনি ডে মন্টিজো (Eugénie de Montijo) তার বানানো বক্স পছন্দ করলেন এবং তাকে তার ব্যক্তিগত বক্স বানানোর কারিগর হিসেবে নিয়োগ দিল। কিন্তু লুইয়ের ভাগ্য পাল্টে গেল তখন, যখন ইউজিনি মিশরে সুয়েজ খাল(Suez Canal) এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তার এই ট্রাংক নিয়ে উপস্থিত হলো এবং হঠাৎ করেই তার ট্রাঙ্কগুলো অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পাওয়া শুরু করলো।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়া,স্পেন ও মিশরের অভিজাতগণ এবং সবাই এক ঝটকায় তার লয়্যাল কাস্টমার হয়ে গেলেন। লুই ভিটনের সুটকেস থাকা আভিজাত্যের একটি প্রতীক হয়ে দাড়ালো। কিন্তু এর শেষের অংশটি মোটেও সুখকর ছিল না। লুইর এই সাফল্য খুবই ক্ষণস্থায়ী ছিল কারণ ১৮৭০ সালের ফ্রাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধে লুইসকে তার পুরো পরিবার নিয়ে দ্রুত ফ্রান্স থেকে পালিয়ে যেতে হল।
এত সুনাম অর্জনের পরও এমন-ও এক দিন এল যখন লুই ভিটনের পরিবার শরণার্থী শিবিরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছিল। কিছুদিন পর যুদ্ধ তো শেষ হয়ে গেল কিন্তু লুই পরিবারের বিপদ তখনো শেষ হয় নি। কারণ শেষ পর্যন্ত তারা যখন ঘরে ফিরে এল তখন দেখলো তাদের ঘরের পাশাপাশি তাদের কারখানার সমস্ত জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। অর্থ্যাৎ লুই আবারো একই জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন যেখান থেকে তিনি শুরু করেছিলেন।
কিন্তু আসলেই কি তাই? কারণ এখন তার অভিজ্ঞতা আগের থেকে আরো বেশী এবং তিনি জানতেন যে তার সাফল্যের মূল কারণ ছিল তার unique innovation। তার এই সফলতাকে আবারো ফিরিয়ে নিয়ে আসতে লুই আরো একবার নতুন আইডিয়া নিয়ে মাঠে নামলেন। তিনি ট্রাংকে লাল ও হালকা হলদে বাদামি রঙ্গের এক বিশেষ প্যাটার্ণ তৈরী করলেন। যার ফলে যাত্রীরা দূর থেকেই তাদের লাগেজকে চিহ্নিত করতে পারছিলেন। এটা যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক তো বটেই বরং ব্র্যান্ডের একটা প্রিমিয়াম ভাবও অনুভব করাচ্ছিল। ইতিহাস আবারো পুনরাবৃত্তি করলো এবং লুইর ব্যাগ আরো একবার বাজারে আধিপত্য লাভ করা শুরু করলো। কিন্তু কাহিনীতে এল একটি বড় ধরণের টুইস্ট, হঠাৎ লুইর মৃত্যু হল। কেন এবং কিভাবে তা আজ পর্যন্ত জানা যায় নি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর পুরো ব্যবসা চলে এল তার ছেলে জর্জ (Georges Ferréol Vuitton) এর হাতে।
কিন্তু কথায় আছে না, যেমন বাবা তেমন ছেলে? জর্জ-ও তার বাবার থেকে কোনো অংশে কম ছিলেন না।
যে ট্রাঙ্ক তার বাবা উদ্ভাবণ করেছিলেন সেখানে জর্জ এমন একটা লক যুক্ত করে দিলেন যেটা ভেঙ্গে বের হতে বিখ্যাত escape artist হ্যারি হুডনি পর্যন্ত প্রত্যাখ্যান করলেন। তখন যাত্রীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ ছিল ট্রাক্স থেকে জিনিস চুরি হওয়া যেটা জর্জ চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন এবং দারুনভাবে সমাধান করেছিলেন তার ইনোভেশনের মাধ্যমে।
কারণ LV Trunk-এর নতুন লক এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, কেউ-ই সেটাকে আনলক করতে পারতো না। এর ফলে লুই ভিটন ব্র্যান্ড মার্কেটে আবারো হই চই ফেলে দিল।
এতে তাদের পন্যের উপর ক্রেতাদের বিশ্বাস আরো মজবুত হয়ে গেল। পুরো ইউরোপ জুড়ে লুই ভিটনের শো-রুম খোলা শুরু হতে লাগলো। তুমুল জনপ্রিয়তার মুখে লুইস ভিটন ব্র্যান্ডের অনেকগুলো প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে গেল। তাই জর্জ ব্রান্ডটির প্রবর্তক বাবা লুই ভিটন নামের স্বরণে প্রতিষ্ঠানকে বিখ্যাত LV Monogram দিয়ে দিল। সাথে ফুলের নকশাও দিয়ে দিল। এটা মূলত বাবা লুই ভূটোনেরই চিন্তা ছিল।
তো এতক্ষণের এই গল্পে এটা পরিষ্কার যে, শুরু থেকেই লুই ভিটন যথেষ্ট ইনোভেটিভ ছিল যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিল। কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় এটাই যে এতগুলো লাক্সারী ব্র্যান্ডের ভীড়ে লুই ভিটন কিভাবে এখন পর্যন্ত শীর্ষে টিকে রয়েছে?
কারণ একটাই, Exclusiveness. তাদের মোট ৬০ জন আইনজীবি আছে যাদের পেছনে তারা ১৭ মিলিয়ন ডলার প্রতি বছর খরচ করে শুধু মাত্র মার্কেটের নকল LV প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য। LV তাদের ব্র্যান্ড নিয়ে বাড়াবাড়ি ধরণের সিরিয়াস। তারা কোনোভাবেই চায় না মার্কেটে তাদের সুনাম সামান্যতমও ক্ষুন্ন হোক। এছাড়া LV কখনো তাদের পণ্য কম খরচে অদক্ষ কারিগর দিয়ে তৈরী করায় না। বরং পুরো তৈরী প্রক্রিয়া শুধু এবং শুধুমাত্র ফ্রান্সেই হয়। ১৮ মাস থেকে ২ বছর ধরে প্রতিটি কর্মীকে তারা প্রশিক্ষণ দেয়। এবং তাদের প্রত্যেককে যে কোনো একটি স্কিলেই দক্ষ করে তোলা হয়। তাদের বিশ্বাস, এই পদ্ধতিতে তারা তাদের গুণমান ধরে রাখতে পারছে এবং গ্রাহকদের বিশ্বাসও অক্ষুন্ন থাকছে। কারণ তারা জানে এভাবেই তাদের গ্রাহকরা exclusivity অনুভব করে।
LV তার গ্রাহকদের বিশ্বস্ততা ধরে রাখার জন্য মোবাইল বুটিক্স-এর মতো কনসেপ্ট নিয়ে এসেছে। কোভিডের সময় যখন ক্রেতারা পাবলিক প্লেসে যাওয়া বন্ধ করে দেয় তখন LV এই কনসেপ্ট নিয়ে আসে যেখানে ক্রেতাকে শুধুমাত্র appointment নিতে হয়। এবং ক্রেতা ঘর থেকে বের হয়েই শো-রুমের মতো অভিজ্ঞতা নিতে পারে শো-রুমে যাওয়া ছাড়াই। বরং শো-রুম নিজেই ক্রেতার কাছে এসে উপস্থিত হয়।
নিশ্চিতভাবেই আপনি কখনোই LV-এর কোনো পন্য On sale কিনবা discount-এ দেখবেন না। কারণ তাদের প্রতিটি পন্যের একটি sales target থাকে যেটা শেষ হয়ে যেতেই তারা পন্যটিকে বাজার থেকে তুলে নেয়। তারপর তারা পণ্যটি ধ্বংশ করে ফেলে অথবা কোনো বিশ্বস্ত কর্মীকে উপহার দেয়। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তারা তা আর মার্কেটে বিক্রি করে না।
এখানে আরো একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে এই মুহুর্তে LV-কে ভিটন পরিবারের কেউ নয় বরং বাইরের একজন মানুষ চালাচ্ছেন। ১৯৮০ সালে LV ব্র্যান্ড ভিটন পরিবার থেকে হাতছাড়া হয়ে যায়। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো বিষয় এই যে, এই মানুষটির একটি কৌশল-ই তাদের প্রফিট মার্জিন দ্বি-গুন করে ফেলে।
ঘটনাটি এমন ছিল যে জর্জ ভিটনের ৩ জন নাতি ছিল। তাদের প্রত্যেকের-ই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মতামত আলাদা ছিল এবং এই নিয়ে তাদের যথেষ্ট দ্বন্দ্ব চলছিল। তাই তাদের ভগ্নিপতি হেনরি রিকেইমার (Henry Racamier) LV সামলানোর দায়িত্ব নিলেন যিনি কখনোই লুই ভিটনের প্রতিষ্ঠানের অংশীদার ছিলেন না।
দায়িত্ব হাতে নিতেই যখন তিনি LV-র বিতরণ প্রক্রিয়াকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন, এবং দেখলেন রিটেইলাররা পণ্যগুলো শত ভাগ লাভে বিক্রি করছিল। ১ লাখ টাকার ব্যাগ ২ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, এবং LV এ লাভের কোনো অংশই পাচ্ছিল না। LV-র লাভের অংশ রিটেইলারদের তুলনায় যথেষ্ট কম ছিল । আর তাই তিনি সাথে সাথে এক নতুন Vertical Integration নামের এক অভিনব কৌশল প্রয়োগ করলেন। আর ঠিক এভাবেই যেখানে বাকী ব্র্যান্ডগুলো শতকরা ১৫ -২০ ভাগ লাভ করছিল, সেখানে LV প্রতিষ্ঠানের লাভের পরিমান গিয়ে দাঁড়ালো শতকরা ৪০-ভাগ। আক্ষরিক অর্থেই দ্বি-গুণ!
কিন্তু Vertical Integration কৌশল বিষয়টি কি? এখানে প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল ক্রয় থেকে শুরু করে গ্রাহকের হাতে পন্য পৌছে দেওয়া পর্যন্ত সব কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেই করে থাকে। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানে খুচরা বিক্রেতা, মধ্যস্থতাকারী এবং লভ্যাংশভোগী কারো কোনো জায়গা থাকলো না। এই কৌশল লুই ভিটনের জন্য এতটাই দূর্দান্ত ছিল যে এতে লাভের সংখ্যাটি তো বাড়লোই বরং সাথে সাথে সামগ্রিক মান নিয়ন্ত্রণ, কাস্টমারদের অভিজ্ঞতা নিয়ন্ত্রণ এবং ব্র্যান্ডের সুনাম রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে এল। অবাক করার মতো বিষয় এই যে তখন থেকে আজ পর্যন্ত নিজের মূল্যকে প্রমাণ করে একজন বহিরাগত-ই ব্যবসাটা চালাচ্ছেন। এবং আজ এই বিশাল বহুপন্যের প্রতিষ্ঠানটি LVMH (Louis Vuitton Moët Hennessy) নামে পরিচিত।
কিন্তু আপনি কি জানেন, নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় জীবন্ত সব কুমিরদের শুধু ও শুধু মাত্র প্রতিষ্ঠানটির ব্যাগ তৈরীর চামড়া পাওয়ার জন্য? তাদের জীবনের বিনিময়ে অভিজাত শ্রেনীকে Exclusiveness দেওয়ার নামে অপচয় ও বিলাশিতায় উৎসাহ দিয়ে আসা LVMH brand কে প্রশ্ন, সমালোচনা আর জবাবদীহিতার সামনা-সামনি হতে হয় কয়েকবারই। তাই বিকল্প উপকরণ ব্যবহার এখন নৈতিক দাবী নয় কি? আর হ্যা, LV Colonial Exhibition-এর আয়োজন ঠিকই করেছিল কিন্তু সেখানে কৃষ্ণাঙ্গদের খাঁচায় বন্দী রেখে প্রদর্শণ করা হয়েছে এমন তথ্যের যথাযথ কোনো প্রমান এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।
এবং এর লেখক নিজেও এই তথ্যের উৎস পরিষ্কারভাবে জানাতে না পারায় লেখাটি মুছে ফেলা হয়। তাই সব দিক বিবেচনা করে আমরা এটার উপর কোনো চূড়ান্ত মতামত দিতে পারি না।
ব্লগটি ভাল লেগে থাকলে নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন, যেন আমাদের একটি ব্লগও আপনার মিস না হয়। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।