টেক্সটাইল থেকে মিডিয়া সাম্রাজ্যের উত্থান! যমুনা গ্রুপ | Rise of Jamuna Group | Business Mania
যমুনা গ্রুপ, বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ এবং প্রভাবশালী কনগ্লোমারেটগুলোর (Conglomerates) একটি।
বাংলাদেশে সংগঠিত হওয়া জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট (Fascist) বিরোধী একমাত্র মিডিয়া হিসেবে যেই চ্যানেলটি সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করে সেটা হলো যমুনা টেলিভিশন। শুধু মাত্র সৎ আর সঠিক সংবাদ প্রচারের কারণে অল্প কিছুদিনের মাথাতেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে ফেলে এই চ্যানেলটি। সেই সাথে হয়ে উঠে জনগনের আস্থা আর ভরসার জায়গা।
ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের সময় অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে গিয়েছিল যে লোক মুখে বলতে শোনা যায়,” যদি সঠিক খবর জানতে চান তাহলে যমুনার সংবাদ শুনেন।”
ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে জনতার এতটাই আস্থার জায়গা হয়ে উঠে এই চ্যানেলটি। তবে এই আস্থার প্রতিদান ও মানুষ বেশ ভালোভাবেই ফেরত দেয়। ৫ আগস্ট সরকার এর পতন ঘটলে মানুষ রীতিমতো যমুনা টিভির রিপোর্টারদের নিয়ে মিছিল তো করেই সাথে কাধে তুলে আনন্দ উচ্ছ্বাস করতে থাকে।
তো বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাওয়া এই যমুনা টেলিভিশন আসলে যমুনা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। আজকের ভিডিওতে আমরা জানবো এই যমুনা গ্রুপের উত্থান, এদের ব্যাপকতা আর বাংলাদেশে এদের ভূমিকা সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হলেন, নুরুল ইসলাম বাবুল। তিনি ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। নুরুল ইসলাম বাবুল জন্মগ্রহন করেন ১৯৪৬ সালের ৩ই মে ঢাকার নবাবগঞ্জে, কামারখোলা নামের গ্রামে। এরপর তিনি তার শিক্ষা জীবন ঢাকাতেই শুরু করে।
স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করার সময় ১৯৭১ সালে দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, সাত পাচ না ভেবেই ২৫ বছরের যুবক নুরুল ইসলাম বাবুল মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।পরবর্তীতে দেশে স্বাধীন হলে, তিনিও দেশ গড়ার কাজে নিজেকে যুক্ত করেন।
১৯৭৪ সালে কেবল একটা দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে তিনি শুরু করেন তার প্রথম প্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিক এন্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। শুরু দিকে প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ছোট খাটো ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জামাদি তৈরী করতে থাকে। তূলনামুলকভাবে কম দামী কিন্তু মানে ভালো ইলেক্ট্রিক্যাল পণ্যের , সে সময় ব্যাপক চাহিদা ছিল। ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নুরুল ইসলাম বাবুলের এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
এরপর ১৯৭৬ সালের দিকে চাহিদার কথা মাথায় এনে শুরু করেন পিভিসি আর পাইপ তৈরির কাজ।
১৯৭৮ সালে এসে প্রথম বারের মতো যমুনা ফ্যান নামের একটা ফ্যান বাজারে আনে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের বাজারে এই ফ্যান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে. ১৯৭৮ থেকে ৮২ মাত্র এই চার বছরে দেশের প্রতিটা প্রান্তে এই যমুনা ফ্যান ছড়িয়ে পরে।
এরপর চলে বেশ কয়েক বছর। সে সময় দেশে জুতার কোম্পানি বলতে কেবল মাত্র ছিল বাটা যা একটা বিদেশি কোম্পানি। কিন্তু বাটা বাদ দিয়ে দেশে সেই সময় আর বড় কোন কোম্পানি ছিল না। তাও যেই দু একটা লোকাল কোম্পানি ছিল সেগুলোর গন্ডি ও ছিল নিজ উপজেলা থেকে জেলার ভিতরে। ফলে জুতার একটা বড় বাজার ছিল। দেশের মানুষের এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই নুরুল ইসলাম বাবুল এবার চালু করেন প্যাগাসাস নামের একটা জুতার প্রতিষ্ঠা। স্যান্ডেল শু এর পাশাপাশি সময়ের সাথে সাথে লোফার ও তৈরী করতে শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি।
তবে স্কুলগামী বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা সাদা কেডসগুলোর জনপ্রিয়তা অনেকাংশেই ছিল বাটার চেয়েও বেশি। এমনকি এখনও জুতার বাজারে গেলে বাটা আর অ্যাপেক্স এর পাশাপাশি মানুষের প্রথম পছন্দের সারিতে আপনি প্যাগাসকেই পাবেন।
শুধু তাই নয় দেশে পোষাক শিল্পের ব্যাপক চাহিদা দেখা দিলে ১৯৯২ সালে চালু করেন যমুনা নিটিং এন্ড ডায়িং লিমিটেড। কয়েক বছরের মাথাতেই দেশের পাশাপাশি বিদেশেও তৈরি পোষাক রপ্তানি করতে শুরু করে।
এরপর নুরুল ইসলাম নজর দেন দেশের মিডিয়া জগতের দিকে। ২০০০ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী প্রয়াত কবি ও সাহ্যিতিক গোলাম সারওয়ারকে প্রধান সম্পাদক করে খুলে ফেলেন দৈনিক যুগান্তর। যেখানে নিয়ম করে দেশ ও বিদেশের প্রতিদিন ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য সব ঘটনাগুলি প্রকাশিত হতে থাকে। এবং প্রকাশনা শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই দৈনিক যুগান্তর দেশের প্রথম সারির সংবাদগুলোর মধ্যে একটি হয়ে যায়।
চলুন এবার জানা যাক আমাদের বহুল জনপ্রিয় যমুনা টিভির যাত্রা সম্পর্কে। ২০০২ সালে সর্বপ্রথম যমুনা গ্রুপ একটা টিভি চ্যানেল চালু করার লাইসেন্স পায়। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রাংশ, অবকাঠামো নির্মানের পর। ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে সম্প্রচার চালু করার অনুমোদন পায় যমুনা টিভি। কিন্তু পরীক্ষামূলক ভাবে সম্প্রচার শুরু করার মাত্র দেড় বছরের মাথায় ২০০৯ সালে তৎকালীন সরকার চ্যানেলটির অনুমোদন বাতিল করে দেয়।
তবে ২০১৪ সালের ১৭ই জুন এসে পুনরায় যমুনা টিভি তাদের সম্প্রচার শুরু করার অনুমোদন পায়। সেই থেকে শুরু। সম্প্রচার শুরু করার মাত্র ৬ বছরের মাথায় যমুনা টিভি দেশের সেরা ৫টি টিভি চ্যানেলের একটা হিসেবে সামনে আসে। আর বর্তমান সময়ে এসে এটাকে দেশের জনপ্রিয়তার দিক থেকে শীর্ষ টিভি চ্যানেল বললেও ভুল হবে না।
২০১৪ সালে আরো একটা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে যমুনা গ্রুপ, সেটা হলো যমুনা ইলেকট্রনিক্স। এর মধ্য দিয়ে সাশ্রয়ী দামে সর্বোচ্চ মানের ইলেকট্রনিক্স পন্য তৈরী করতে শুরু করে। এর মধ্যে যমুনা ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর, এসি, ওয়াশিং মেশিন, টিভি উল্লেযোগ্য।
এছাড়াও যমুনা গ্রুপের আন্ডারে রয়েছে বাংলাদেশের তো বটেই দক্ষিন এশিয়ার ও সবথেকে বড় শপিং কমপ্লেক্স যমুনা ফিউচার পার্ক; এবং আয়তনের দিক থেকে যেটা বিশ্বের সব বড় বড় শপিং কমপ্লেক্সগুলোর মধ্যে অন্যতম । ২০০২ সালের দিকে যমুনা বিলডার্স এর হাত ধরে এর নির্মান কাজ শুরু হয়। প্রায় ৪১ লক্ষ বর্গফুট বা ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গ মিটার আয়তনের উপর নির্মিত এই শপিং কমপ্লেক্সটি নির্মান কাজ শেষ করে ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টম্বর জনসাধরণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রায় ৪১ লাখ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই শপিং মলটি শুধু কেনাকাটার কেন্দ্রই নয়, এটি একটি বিনোদনকেন্দ্রও ।
এভাবেই সময়ের সাথে ধীরে ধীরে কেবল মাত্র একটা দোকান নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই যমুনা গ্রুপ তাদের বিশাল সম্রাজ্য তৈরী করে। যাত্রা শুরুর মাত্র ৪৬ বছরের মধ্যে যমুন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছে প্রায় ৪১টির মতো প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে ব্যবসায় এন্টারপ্রাইজ, দৈনিক যুগান্তর, যমুনা ফিউচার পার্ক, যমুনা টিভি, ক্রাউন বেভারেজ, যমুনা নিতিং এন্ড ডায়িং লিমিটেদ, যমুনা ডেনিমস লিমিটেদ, যমুনা সিটি, নিউ উত্তরা মডেল টাউন, প্যাগাসাস লেদার লিমিটেড, যমুনা ইলেকট্রনিক্স ও মোটরগাড়ি উল্লেখযোগ্য।
তবে ২০২০ যমুনা গ্রুপ বিশাল এক ধাক্কা খায়। কেন সেই বছরই করোনায় আক্রান্ত হয়ে যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নুরুল ইসলাম বাবুল মৃত্যুবরন করেন। পরবর্তীতে সকলের সম্মতিক্রমে একই বছর যমুনা গ্রুপের চ্যায়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন নুরুল ইসলাম বাবুল এর স্ত্রী সালমা ইসলাম, যিনি ছিলেন ঢাকা ১ আসনের সাবেক এমপি। এছাড়াও ওনাদের তিন মেয়ে যথাক্রমে উপেষ্ঠা পরিষদের সদস্য আর এক মাত্র ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন।
সেই থেকে তারই হাত ধরে যমুনা গ্রুপ পরিচালিত হচ্ছে।
যমুনা গ্রুপ নিয়ে জনমত মিশ্র। অনেকেই তাদের ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদানের প্রশংসা করেন। এছাড়াও, যমুনা গ্রুপ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে এই গ্রুপ, যা দেশের বেকারত্ব হ্রাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
জুলাই আগস্টে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনের জন্য আমরা সকলেই যমুনা টিভির কাছে কৃতজ্ঞ।
প্রিয় দর্শক , জুলাই আগস্টে সঠিক সংবাদ পেতে যমুনা টিভি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করেছে তা কিন্তু আমাদের জানাতে ভুলবেন না । এছাড়াও আমাদের মতো আপনিও যদি প্যাগাসাস এর জুতা ব্যবহার করে থাকেন তাও আমাদের জানাতে ভুলবেন। সেই সাথে যমুনা গ্রুপ নিয়ে আপনার নিজসব মত থাকলে তাও আমাদের জানাতেন ভুলবেন না।
Business Maniar আমাদের আজকের ভিডিওটি এই অব্দিই।ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক দিন এবং কমেন্ট করুন। আর কোন কোন টপিকের উপর ভিডিও দেখতে চান তাও আমাদের জানান আর এরকম আরো ভিডিও দেখতে চাইলে, চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে বেল বাটন্টি প্রেস করে রাখুন। দেখা হবে নেক্সট কোন ভিডিওতে।