আচার থেকে শুরু, আজ কোটি টাকার সাম্রাজ্য! | Prome Agro Foods
বাংলাদেশে জনপ্রিয় ফুড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলোর তালিকা করলে যে কয়েকটা নাম উঠে আসবে তার মধ্যে একটা হলো “প্রমি এগ্রো ফুড লিমিটেড” । একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা জেলা উপজেলা কিংবা গ্রামেও প্রমি এগ্রো লিমিটেড এর কোন না কোন পন্য অনায়াসে পাওয়া যেত।
৯০ এর দশকে জন্ম অথব প্রমি এর আচার কিংবা বিশেষ করে প্রমি এর স্যালাইন খায় নি এমন বাংলাদেশী হয়তো খুজে পাওয়া যাবে না।
প্রিয় পাঠক বিজনেজ মিনিয়ার আজকের ব্লগটি প্রমি এগ্রো ফুড লিমিটেডকে নিয়েই। তাহলে চলুন ব্লগটি শুরু করা যাক।
প্রমি এগ্রো ফুড লিমিটেড তাদের যাত্রা শুরু করে ১৯৮২ সালের দিকে। তাদের যাত্রা শুরু হয় এনামুল হাসান খান এর হাত ধরে। তবে শুরু থেকেই যে প্রমি এগ্রো এতটা সফল ছিল এমন না। যাত্রার শুরু দিকেই এনামুন হাসান খানকে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এ সময় কোম্পানির নাম ও প্রমি এগ্রো ফুড লিমিটেড ছিল না।
পরবর্তীতে ২০০২ সালে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রমি এগ্রো ফুড লিমিটেড এই নামে তাদের পথ চলা শুরু করে। এভাবেই শুরু, যাত্রা শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্যের গুণগত মানের জন্য শুধ দেশেই নয় বিদেশেও ব্যাপক সুনাম অর্জন করে।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেড জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ISO-22000:2005, BSTI ও হালাল সনদপত্র অর্জন করে, যা বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য ছিল উল্লেখযোগ্য অর্জন।
বর্তমান বিভিন্ন ক্যাটারগারিতে বেশ কিছু খাদ্য পন্য তৈরী করে থাকে প্রমি এগো লিমিটেড। যেমন
মসলা ক্যাটাগরিতে মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, গরম মসলা, চিকেন কারি মসলা, ফিশ কারি মসলা, বিফ কারি মসলা, বিরিয়ানি মসলা, হালিম মিক্স, পঞ্চফোরন, শুকনা তেজপাতা, শুকনা মরিচ, গোল মরিচ, জিরা (সম্পূর্ণ), মেথি, শাত ,ইসুবগুল, বেসন, ঝিনতান হিতাল বাজারজাত করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
এর পাশাপাশি বিস্কুক ও বেকারী পন্যের মধ্যে ড্রাই কেক, টোস্ট বিস্কুট, কুকিজ, লাচ্ছা সেমাই। এছাড়া ড্রিংক্স এর মধ্যে ম্যাঙ্গো ড্রিংকস, কমলা ড্রিংকস, লিচু ড্রিংকস, সফট ড্রিংকস, রেডি টি, টেস্টি স্যালাইন, ক্যালসোমিল্ক বাজারজাত করে থাকে। এর মধ্যে টেস্টি স্যালাইন দেশের সাধারন মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়।
সেই সাথে নাস্তা ও স্ন্যাকস জাতীয় প্যণের ক্যাটাগরিতে চানাচুর, ঝালমুড়ি, ভাজা মটর, ভাজা ডাল, ফ্ল্যাটেন্ড রাইস, পাফড রাইস। এছাড়াও তেল আর সসের মধ্যে সরিষার তেল, তিলের তেল, টমেটো সস, চাটনি, আচারের বিভিন্ন প্রকার (আমের আচার, অলিভ আচার, মিক্সড আচার)। বাজারজাত করে থাকে।
অন্য দিকে ডিজার্ট আইটেমের মধ্যে পুডিং, জেলি (বিভিন্ন স্বাদের), আইস ললি, আইসক্রিম পুডিং। ও চালের মধ্যে প্যাকেটজাত চিনিগুড়া চাল, কালিজিরা চাল বাজার জাত করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি
এ বাদেও সয়া মিট ও গুড় (আখের গুড়) এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের কৃষিজ পণ্য যেমন বিভিন্ন ফসলের বীজ ও বাজারজাত করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি ।
বর্তমানে প্রমি এগ্রো লিমিটেড বছরে প্রায় ১০ লক্ষ টন পরিমান খাদ্য পন্য বাজারজাত করে থাকে। যেগুলো বাংলাদেশ ছাড়াও আরও প্রায় ২৪টি দেশে প্রতিনিয়ত রপ্তানি করা হয়।
দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, বাহরাইন, ওমান, ম্যালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা।
আর এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করার জন্য প্রমি এগ্রো ফুডের রয়েছে ৩০০০ জন কর্মীর বিশাল এক কর্মী বাহিনি।
দেশের অর্থনীতিতে বিশাল এই অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত CIP (শিল্প) নীতি-২০১৪ অনুসারে, দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য — বেসরকারি খাতে শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জাতীয় আয় বৃদ্ধির স্বীকৃতিস্বরূপ, প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেডের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ এনামুল হাসান খানকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (CIP) হিসেবে মনোনীত করা হয়।
প্রিয় দর্শক এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে এই সি আই পি জিনিসটা কি?
CIP এর পুরো অর্থ হলো Commercially Important Person, সহজ বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় “বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি”।
বাংলাদেশ সরকার প্রতিবছর কিছু বিশিষ্ট উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিকে CIP মর্যাদা প্রদান করে—যারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এই মর্যাদা এক ধরনের স্বীকৃতি ও সম্মান, যা সরকারিভাবে প্রদান করা হয়।
CIP স্ট্যাটাস পাওয়া ব্যক্তিরা সাধারনত সরকারিভাবে নানারকম সুবিধা পেয়ে থাকেন যেমন সরকারি যেকোন অফিসে অগ্রাধিকার, বিদেশ ভ্রমনে অগ্রাধিকার, জাতীয় যে কোন প্রোগ্রামে আমন্ত্রন পাশাপাশি ব্যাংক থেকে বিশেষ ঋন নেওয়ার সুযোগ থেকে শুরু করে আরো বেশ কিছু।
বাংলাদেশ সরকার থেকে প্রতি বছরই ৪০ থেকে শুরু করে ১৮০ জনকে এই সম্মাননা প্রদান করে থাকে। যেমন ২০১৬ সালে ১৭৮ জনকে, ২০১৯ সালে ১৮২ জনকে ও ২০২৪ সালে ১৮৪ জনকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
দেশের অর্থনীতিতে অবদানের জন্য প্রমি এগ্রো ফুডের প্রতিষ্ঠাতা এনামুল হাসান খান ২০১৫ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের মধ্যে ৬ বার এই সি আই পি সম্মাননা পেয়েছেন।
তবে এনামুল হাসান খান শুধু একজন ব্যবসায়ীই নন, বরং এক জনদরদী সমাজকর্মী, যিনি সমাজের প্রান্তিক মানুষের জন্য নিরবেই কাজ করে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে। তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজগুলো যেমন বিস্তৃত, তেমনি বাস্তব ও প্রমাণযোগ্য।
উত্তরা থানাধীন উত্তরখান এলাকায় এনামুল হাসান খান নিজ উদ্যোগে একাধিক এতিমখানা ও ইসলামি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে শত শত এতিম ও দরিদ্র শিশু বিনামূল্যে আবাসন, খাদ্য এবং শিক্ষাসেবা পাচ্ছে। শুধু ধর্মীয় শিক্ষা নয়, তিনি সাধারণ শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিয়েছেন। এজন্য তিনি এলাকায় একটি আধুনিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও, নারী ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তিনি চালু করেছেন সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে নারীরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজে আয় করার সক্ষমতা অর্জন করছে।
ধর্মীয় অনুশাসনের গুরুত্ব বিবেচনায় এনামুল হাসান খান একাধিক মসজিদ ও কবরস্থান প্রতিষ্ঠা করেছেন উত্তরখান অঞ্চলে। এসব প্রতিষ্ঠান স্থানীয় মানুষের দৈনন্দিন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রয়োজন মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে কবরস্থানটি গরিব মানুষের জন্য বিনামূল্যে দাফনের সুযোগ করে দিয়েছে।
প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ এবং ঈদে পোশাক ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান এনামুল হাসান খানের নিয়মিত উদ্যোগের মধ্যে পড়ে। তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাড়াও এলাকাবাসীর একটি বড় অংশ তাঁর এই সহায়তার আওতায় আসে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় তিনি নিজ উদ্যোগে এবং প্রমি এগ্রো ফুডসের মাধ্যমে হাজার হাজার পরিবারে ত্রাণ, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং ওষুধ বিতরণ করেন। একই সময়ে ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।
প্রিয় পাঠক আমাদের বিজনেজ মিনিয়ার আজকের ব্লগটি এই অব্দি। ব্লগটি ভালো লাগলে তা আমাদের জানাতে ভুলবেন না। সেই সাথে আর কোন কোন টপিকের উপর আপনি ব্লগ পড়তে চান তাও আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা কোন সমালোচনা বা আমাদের জন্য কোন সাজেশন থাকলে তাও জানাতে পারেন। দেখা হবে নতুন কোন টপিক নিয়ে নতুন কোন ব্লগে সেই অব্দি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সচেতন থাকুন। ধন্যবাদ।