৩০ হাজার কোটি টাকার স্ক্যাম ! সাধারন ফলের দোকানদার থেকে মাস্টারমাইন্ড | The BIGGEST SCAM of India
কেমন লাগবে যদি হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে জানতে পারেন, জাল স্ট্যাম্প পেপারে লেখা হয়েছিল আপনার স্বপ্নের বাড়ির দলিল, ব্যবসার চুক্তি, এমন কি বিয়ের কাবিন নামাও! এতদিনের বৈধ জানা যা কিছু, কিছুই আর বৈধ নয়! এবং শুধু আপনার নয়, দেশের লাখ লাখ মানুষেরও আপনার মতো একই অবস্থা।
পায়ের নীচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো ঠিক এমনই এক অবিশ্বাস্য দিন দেখতে হয়েছিল ভারতের অগনিত মানুষকে। শুধু তাই নয়, এটি ৩০ হাজার কোটি টাকা লোকসানের এমন এক কালো অধ্যায় যা এক যুগেরও বেশী সময় ধরে কলংকিত করে রেখেছিল ভারতের অর্থনীতিকে।
পুলিশ, গোয়েন্দা ও সরকারের সবগুলো বিভাগের কড়া নজরদারি এড়িয়ে কিভাবে ঘটে চলছিল এমন ঘটনা? কে ঘটিয়েছিল ঘটনাটি? কিভাবে ধরা পড়লো? আর সবচেয়ে বড় কথা, কি হয়েছিল সে জাল স্ট্যাম্পে চুক্তি লেখা মানুষগুলোর?
এক রেল কর্মকর্তার ছেলে
এক রেল-কর্মচারির পরিবারে জন্ম নেওয়া ছেলে আবদুল করিম তেলগির (Abdul Karim Telgi) বয়স যখন ৮ বছর তখন তার বাবা মারা যান। দু বেলা খাবারের যোগান দিতে রেলের পাশে একটি ভ্যানে করে ফল ও সব্জি বিক্রি করতে বাধ্য হয় তার পরিবার। টানা পোড়নের সংসারে কাজে হাত মেলায় ছোট্ট তেলগীও।
পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছা
দারিদ্রতা পেছন থেকে টেনে ধরলেও পড়ালেখার অদম্য ইচ্ছাকে বিসর্জন দিতে নারাজ তেলগি ফল বিক্রির টাকা জমিয়ে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হয় এবং এভাবেই নিজের টাকায় বি. কম.পাশ করার পর সৌদি আরবের (Saudi Arabia) উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
পরিকল্পনার শুরু
সেখানে সে খেয়াল করে ভারত (India) থেকে বহু মানুষ সৌদি আরবে কাজের জন্য আসতে চায় কিন্তু সঠিক নথির কারণে তারা আসতে পারে না। তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় ভারতে ফিরে গিয়ে একটি এজেন্সি খুলবে। যেখানে এমন মানুষদের টার্গেট করা হবে যাদের সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য সঠিক নথি নেই এবং তাদেরকে সে ফেইক পাসপোর্ট, ভিসা, ইমিগ্রেশন বানিয়ে দেবে।
পরিকল্পনার বাস্তব রুপ
পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ভারতে ফিরে আসে এবং অ্যারাবিয়ান মেট্রো ট্রাভেলস ( Arabian Metro Travels ) নামের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে যার মাধ্যমে সে ভারত থেকে সৌদি আরবে শ্রমিক রপ্তানির জন্য জাল পাসপোর্ট ও নথি তৈরি শুরু করে। প্রত্যেকটি কাজ সে এতো চালাকির সাথে করতো যে কেউ-ই ইমিগ্রেশনের সময় ধরা পরেনি।
গ্রেফতার? নাকি শাপে বর?
১৯৯১ সালে পুলিশ এই সবকিছু জানতে পেরে আবদুল করিম তেলগিকে (Abdul Karim Telgi) গ্রেফতার করে।
এখন কথা হলো জেলে যাওয়ার পর মানুষের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, কিন্তু তেলগির ব্যাপারে ঘটনা ঘটলো পুরো উল্টো।
এখানে তার পরিচয় রামরাতান সোনিয়ের (Ramratan Soni) সাথে হয়। যে তার অপরাধের কারণে অনেকবার জেলে গিয়েছিলো। রামরাতান সোনি কলকাতায় স্ট্যাম্প পেপার বেচা সহ আরো অনেক দূর্নীতি তে সিদ্ধহস্ত ছিল। ১৯৫২ সালে যখন তারা ২জন জেল থেকে ছাড়া পায়, তখন তেলগি-ও রামরাতান সোনিয়ের সাথে কাজ করা শুরু করে। কিন্তুু কিছুদিন পর তাদের মাঝে ঝগড়া হয়। আর তাই তেলগি রামরাতান সোনিয়ের সাথে কাজ করা ছেড়ে দেয়।
একটি ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের সূচনা
সে সময় তেলগির রোজগার বেশ ভালো চলছিল। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয় এবার সে জাল স্ট্যাম্প কাগজ বিক্রি করা শুরু করবে। স্ট্যাম্প পেপার হল এমন নথি যা আগে থেকে মুদ্রিত স্ট্যাম্প রাজস্ব বহন করে, যা ভারতীয় স্ট্যাম্প অ্যাক্ট এর মাধ্যমে বৈধভাবে বৈধ।
দুই ধরণের স্ট্যাম্প রয়েছে একটা বিচারক এবং নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প। যখন দেওয়ানী মামলায় আদালতের ফি দিতে হয়, তখন তা বিচারক স্ট্যাম্পের আকারে করা হয়, কারণ নগদ এবং চেক অর্থপ্রদানের গ্রহণযোগ্য উপায় নয়। অন্যদিকে, নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয় কোনো চুক্তির খসড়া তৈরি করার সময়, যেমন ভাড়া চুক্তি, উপহারের দলিল ইত্যাদি। আর এই কাগজগুলো ভারত সরকার দ্বারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিক্রি করা হয়।
কৃত্তিম চাহিদা
তেলগির কাজগুলোর দু’টি দিক ছিল। একটি ছিল জাল স্ট্যাম্প নথি তৈরি করা। দ্বিতীয়টি ছিল স্ট্যাম্প পেপারের ঘাটতি তৈরি করা যা তেলগির জন্য জাল সরবরাহের সঠিক সুযোগ তৈরি করবে। তেলগির দল নথির কৃত্রিম অভাব তৈরি করতে এবং জাল কাগজপত্র তৈরি করার জন্য যন্ত্রপাতি ও মুদ্রণ সামগ্রী পেতে মহারাষ্ট্রের ভারতীয় নিরাপত্তা প্রেসের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতো। জাল নথিগুলির মধ্যে ছিল স্ট্যাম্প পেপার, জুডিশিয়াল কোর্ট ফি স্ট্যাম্প, রেভিনিউ স্ট্যাম্প, বিশেষ আঠালো স্ট্যাম্প, বিদেশী বিল, দালালের নোট, বীমা পলিসি, শেয়ার ট্রান্সফার সার্টিফিকেট, বীমা সংস্থা এবং আরও অনেক আইনি নথি।
তেলগির এই ব্যবসা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছিল। ৫ বছরেই সে কোটি কোটি টাকা আয় করে ফেলে। সে তার এই অবৈধ ব্যবসা মহামারীর মতো ভারতের ২৫ টি রাজ্যে ৭০ টিরও বেশি শহরে ছড়িয়ে দিয়েছিল। তেলগি এই জাল স্ট্যাম্প কাগজ বিক্রি করার জন্য ৩০০ জনকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেছিল।
পুলিশরা কোথায় ছিল?
কিন্তু এখন আপনার মনে অবশ্যই এই প্রশ্ন আসবে যে এতো বড় বড় সব ঘটনা ঘটার পরেও কেন আবদুল করিম তেলগী তার অপকর্মের জন্য ধরা পরেনি?
তেলগি মানুষকে টাকা দিয়ে কিনতেও বেশ পারদর্শী ছিল। সে খুব ভালো করেই জানতো কখন কার পকেটে টাকা দিলে আর সে ধরা পড়বে না। আবদুল করিমের উপর ২৫ টিরও উপরে FIR করা ছিল কিন্তু action নেওয়ার মতো কেউ ছিলনা।
অনেক পুলিশ অফিসার আর বড় বড় কর্মকর্তাদের সে টাকা দিয়ে নিজের পক্ষে কিনে নিয়েছিল। এখন পর্যন্ত তেলগির সম্পত্তির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি। তবে ধারনা করা হয় ১০০ বিলিয়নের বেশি টাকা কুক্ষিগত ছিল তার কাছে।
রাজস্বে প্রভাব
তেলগির এসব কর্মকান্ড অনেক রাজ্যের রাজস্বের উপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে জাল স্ট্যাম্প পেপার বিক্রির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হয়- যা অর্থনীতি ও জনসাধারণের তহবিলকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। এই ঘটনার সাথে সরকারী লোকদের সম্পৃক্ততা ছিল যার মধ্যে ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেসের লোকেরাও রয়েছে যারা তেলগিকে মুদ্রণ প্রযুক্তি স্থানান্তর করতে সহায়তা করেছিল। এটি দুর্নীতি এবং সরকারি যন্ত্র ব্যবহারের সততা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
ক্ষুব্ধ জনগণ
এটিকে ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তেলগি কেলেঙ্কারি জনসাধারণের ক্ষোভ ও বড় ধাক্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায় এর ব্যপকতা এবং অর্থের পরিমাণের কারণে। এটি পুরো জাতিকে হতবাক করেছে এবং নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কঠোর ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছে। লাখ লাখ মানুষ অজান্তে তেলগির জাল স্ট্যাম্প পেপার কিনেছিল, যা তাদের অবৈধ নথি দিয়ে রেখে যেত যদি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (Reserve Bank of India) হস্তক্ষেপ না করত। এতে জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়। তেলগি স্ক্যামের পরিণতির মধ্যে রয়েছে আইনি প্রতিক্রিয়া, সরকারের রাজস্ব ক্ষতি, সরকারের মধ্যে দুর্নীতির প্রকাশ, জনরোষ, এবং জাল স্ট্যাম্প পেপারের নিরীহ ক্রেতাদের উপর প্রভাব।
তেলগির একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ছিল যা ১৩টি রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। যার মধ্যে ১৭৬টি অফিস, ১০০০ কর্মচারী এবং ব্যাঙ্ক, বীমা কোম্পানি ও স্টক ব্রোকারেজ ফার্ম সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান জড়িত ছিল। সরকারি লোক এবং ইন্ডিয়া সিকিউরিটি প্রেসের সম্পৃক্ততা কেলেঙ্কারি মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল।
২০০১ সালে বেঙ্গালুরুর পুলিশ স্ট্যাম্প ভরা একটি ট্রাক ধরে। তারা দেখে ট্রাকের ভিতর সব স্ট্যাম্প ফেইক। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা এই ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে এবং শেষে এইসব কিছুর মাস্টারমাইন্ড আবদুল করিম তেলগির কাছে পৌঁছে যায়। যখন এই তদন্ত চলতে থাকে তখন আবদুল করিম তেলগি জানতেই পারেনি তার বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করছে। জানলে সে আগেই টাকা দিয়ে তদন্ত বন্ধ করে রাখতো। কিন্তু তারপরেও আবদুল করিম বেঁচে যায়। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করবে তার আগেই সে সেখান থেকে পালিয়ে যায়৷ কিন্তু তার কালো রাজ্যের সাম্রাজ্য আর বেশি দিন টিকে নি। পুলিশ বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর পায় যে আবদুল করিম তেলগি আজমীর শরীফে যাচ্ছে। পুলিশ সেখান থেকে তেলেগীকে গ্রেফতার করে।
সে প্রথমে পুলিশের কাছে স্বীকার করে যে এই কেলেঙ্কারির সাথে সে একাই জড়িত না। তার সাথে পুলিশ এবং রাজনীতিবিদ সহ অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জড়িত ছিল। এটি শুনে, স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম SIT, বিষয়টি তদন্তের জন্য IPS অফিসার শ্রী কুমারের নেতৃত্বে “STAMPIT” নামের একটি নিবেদিত দল গঠন করে।
একবার তেলগির বিরুদ্ধে ২০০৪ সালে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআই (Central Bureau of Investigation) দ্বারা একটি চার্জশিট দাখিল করা হলে, তাকে কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়, এবং এসআইটি তাকে সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি। কথিত আছে যে তেলগি কারাগার থেকেই তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে এবং ২০১৭ সালে হাইকোর্ট তেলগিকে মোবাইল ফোন সরবরাহ করার জন্য দুই জন কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
তেলগির কেলেঙ্কারি ১৯৯০ এর দশক জুড়ে সরকারি কর্মকর্তা ও আধিকারিকদের সমর্থনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
বিশেষ তদন্তকারী দল SIT তেলগির কাজের সূত্রের সন্ধানে নভেম্বর ২০০২ সালে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পরিচালনা করে, যা জয়সওয়াল রিপোর্ট নামেও পরিচিত। তবে কোনো ইস্যু তোলা হয়নি।
যতক্ষণ না সমাজকর্মী আন্না হাজারে জনস্বার্থে একটি মামলা দায়ের করেন ততক্ষণ পর্যন্ত এসআইটি অনেক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা এবং এমনকি কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে কেলেঙ্কারির সাথে দোষী স্বাবস্ত করে। এসআইটি যখন মহারাষ্ট্রের সমাজবাদী জনতা পার্টির বিধায়ক অনিল গোটে এবং তেলেগু দেশম পার্টির বিধায়ক কৃষ্ণ যাদব সহ ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করতে যাবে তখন কমিশনার শর্মা ২০০৩ সালে SIT দ্বারা তেলগিকে রক্ষা করার অভিযোগে অবসর নেওয়ার একদিন পরে গ্রেপ্তার হয়।
এরপর ২০০৫ সালে, আবদুল করিম তেলগির বিরুদ্ধে কর বিভাগ দ্বারা ১২০ কোটি টাকার ট্যাক্স দাবি করা হয়েছিল। এটি একজন ব্যক্তির উপর আরোপিত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ট্যাক্স দায়গুলির একটি হিসেবে সবার চোখের সামনে আসে। তেলগিকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
স্ট্যাম্প পেপার কেলেঙ্কারি ভারতের প্রশাসনিক এবং নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলিকে হাইলাইট করে অধিকতর স্বচ্ছতা এবং নিয়ম ও প্রবিধানের কঠোর প্রয়োগের আহ্বান জানায়। মামলাটি শেষ পর্যন্ত একাধিক আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। ভবিষ্যতে এই ধরনের কেলেঙ্কারি রোধ করার জন্য স্ট্যাম্প পেপার ইস্যুতে এবং স্ট্যাম্প পেপার রেকর্ডের ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রেও এই কেলেঙ্কারিটি পুরো প্রক্রিয়াটিকে আরো সংস্কারের দিকে ধাবিত করে। কিন্তু সেটা তো ভবিষ্যতের সুরক্ষা। কিন্তু ১৯৫২ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজেদের অজান্তে এই নকল স্ট্যাম্প পেপারগুলো কিনে নিজেদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব চুক্তিগুলো করেছিল এখন সেগুলো কি তবে অবৈধই রয়ে যাবে?
যে ব্যক্তি এই নকল স্ট্যাম্প পেপারে নিজের স্বপ্নের বাড়ির দলিল করেছে তাহলে কি সেই বাড়ির বৈধ মালিক আর সে নয়! যারা নিজেদের বিয়ের কাবিননামা এই নকল স্ট্যাম্প পেপারে করেছে তারা তাহলে বৈধভাবে স্বামী-স্ত্রী নয়!
সরকারের পদক্ষেপ
যেখানে একটি দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের এই সমস্যা, সেখানে নিশ্চয়ই সেই দেশের সরকারকে একটি সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে? ভারত সরকারও তাই করলো। ভারত সরকার সেই সকল নকল অবৈধ স্ট্যাম্পগুলোকে বৈধ ঘোষণা করে। এবং নিজের স্ট্যাম্প পেপারগুলো নকল কিনা সেটা যাচাই করার জন্য কার্যালয়ে গিয়ে নামমাত্র টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্প পেপারগুলো যাচাই করার সুযোগ করে দেয়। সরকার শীঘ্রই স্ট্যাম্প পেপারে নিরাপত্তা চালু করার ব্যবস্থা নেয় এবং কিছুদিন কয়েকটি রাজ্যে স্ট্যাম্প পেপারের বিকল্প হিসাবে ফ্র্যাঙ্কিং মেশিনের ব্যবহার করতে বলে।
আর অপরাধীরা?
এখন আপনি নিশ্চয়ই অবাক হবেন এটা জেনে এতো কিছুর পরেও এই কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড সহ সাতজনকে মাফ করে দেওয়া হয়েছিল! হ্যাঁ, মাফ করে দেওয়া হয়, তবে তার আগেই তেলগী মারা যায়।
বেঙ্গালুরুর ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে (The Victoria Hospital) ২৩শে অক্টোবর, ২০১৭ সালে তেলগি মারা যায়। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস, সেই সাথে মেনিনজাইটিস সহ অনেক দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যায় সে ভুগছিল বলে জানা গেছে।
তার মৃত্যুর এক বছর পর ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রের নাসিক সেশন কোর্ট স্ট্যাম্প পেপার কেলেঙ্কারির মামলায় তেলগি এবং অন্য সাতজনকে মাফ করে দেয়। আদালতের প্রথম শ্রেণীর বিচারক, পি আর দেশমুখ রায় বক্তব্য দিয়েছিলেন যে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমান প্রমাণের অভাব ছিল।