সালমান এফ রাহমান এর বেক্সিমকো গ্রুপের ভবিষ্যৎ কি হবে? The Future of BEXIMCO | Business Mania
বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপ কি বন্ধ হয়ে যাবে? কিভাবে সালমান এফ রহমান কোটি, কোটি টাকা আত্মসৎ করলো?
বেক্সিমকো (BEXIMCO) কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে গত ১৩ই অগাস্ট মঙ্গলবার গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া (Brahmanbaria) ৪ (কসবা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করা হয়। ডিএমপি (DMP) সূত্রে জানা যায় সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হক পালানোর চেষ্টা করছেন, গোয়েন্দা সূত্র থেকে এমন খবরের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালায় রাজধানীর সদরঘাট (Sadarghat) এলাকায়। পালানোর সময় সালমান এফ রহমানকে এক নতুন রূপে দেখা যায়, দাড়ি গোঁফ কেটে তাকে যাতে চেনা না যায় সেজন্য ভিন্ন রূপে পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এত কিছুর পরও সালমান এফ রহমান পুলিশের চোখ এড়াতে পারেনি। রাজধানী সদরঘাট (Sadarghat) এলাকা থেকে সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের আইনজীবী আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। সালমান এফ রহমান বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশনের (Federation) সাবেক সভাপতি।
বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপ এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করলে, জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে সাতটি ব্যাংক থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা এই শিল্প গোষ্ঠী ঋণ নিয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন সালমান এফ রহমানের গ্রেফতার এই ঘটনায় ও নানান দুর্নীতির খবরে সাধারণ মানুষের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে তাহলে কি বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপ অবশেষে বন্ধ হতে চলেছে? আর এই নিয়েই বিজনেস ম্যানিয়ার আজকের ব্লগ পোস্ট।
এ. এস. এফ. রহমান ও সালমান এফ রহমান এর যৌথ উদ্যোগে ৫২ বছর আগে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিঃ বা বেক্সিমকো (BEXIMCO) পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কোম্পানিটি বিনিয়োগ, ব্যাংকিং ও অর্থনীতি, ফার্মাসিটিক্যাল (Pharmaceutical), বস্ত্র প্রস্তুতকরণ, বস্ত্র বিক্রয়, গণমাধ্যম ও আইটি (IT) সেক্টরে তাঁদের যাত্রা শুরু করে। এটি একটি বহুজাতিক নিয়ন্ত্রক কোম্পানি ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমন্বিত কোম্পানি।
বর্তমানে এর পণ্যসমূহ প্রায় ৫৫টি দেশের রপ্তানি করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের শেয়ার বাজার মূলধন তৈরিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এ কোম্পানিটি। বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপ এমন সকল ব্যবসায়ের দিকে মনোনিবেশ করেছে, যে সকল ব্যবসাগুলো এই অঞ্চলে এর আগে কখনো হয়নি। বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপটি কেবলমাত্র দেশের মাটিতে নয় বরং বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ব্যবসাকে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে গেছে। বর্তমানে বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপের আওতাভুক্ত ২১টি অঙ্গ সংস্থা রয়েছে, যার মধ্যে পাঁচটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (DSE) অন্তর্ভুক্ত। দেশের বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে এই বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপটি। ৩৫ হাজারেরও বেশি কর্মী নিযুক্ত হয়েছে এই কোম্পানিগুলোতে।
বেক্সিমকো (BEXIMCO) অধীনস্থ অঙ্গ সংস্থাগুলো হল আইএফআইসি (IFIC) ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মা (BEXIMCO Pharma), ইয়োলো (Yellow), ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন (Independent Television), বিডি নিউজ ২৪ ডট কম (BD News 24.com), বাংলাদেশ অনলাইন লিমিটেড (BOL), বেক্সিমকো পেট্রোলিয়াম লিমিটেড (BEXIMCO Petroleum Limited)।
বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপের পণ্য সামগ্রী রপ্তানির আড়ালে বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন সালমান এফ রহমানের হাজার হাজার কোটি টাকার পাচার করেছে। রপ্তানির আড়ালে সালমান এফ রহমানের হাজার কোটি টাকা পাচার ও ১৭টি মামলা রয়েছে।
এই মামলায় সালমান এফ রহমান ছাড়াও তার ছেলে, ভাই, ভাতিজাসহ প্রতিষ্ঠানের চব্বিশ জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে, সালমানের দুই ছেলে ও বড় ভাই আগে থেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছে। জানা যায় মামলায় রপ্তানির আড়ালে ৮৩ মিলিয়ন বা প্রায় ১০০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই গ্রুপটি ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ ছাড়াও গত কয়েক বছরে বাজার থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে আজাদ রহমান বলেন, সিআইডি (CID) ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকোর (BEXIMCO) বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে তদন্ত শুরু করেছে।
বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ২১ হাজার ৬৮১ কোটি, আইএফআইসি (IFIC) ব্যাংক থেকে ৫২১৮ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক (National Bank) থেকে ২৯৫ কোটি, সোনালী, অগ্রণী ও রুপালি ব্যাংক থেকে পাঁচ হাজার ৬৭১ কোটি এবং এবি ব্যাংক (AB Bank) থেকে ৬০৫ কোটি টাকা সহ মোট ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, সৌদি আরবের যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক ও ফার্মাসিটিক্যালসের (Pharmaceuticals) বেশিরভাগ অর্থ বাংলাদেশ থেকে ওভার ইনভয়েসিং (over-invoicing), আন্ডার ইনভয়েসিং (under-invoicing) ও হুন্ডির (hundi) মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। এমন অবস্থায় বেক্সিমকো (BEXIMCO) গ্রুপটি বন্ধ হয়ে যাবে বলে অনেকেই ধারণা করছে।
কিন্তু সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের সবগুলো কোম্পানিতে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মোহাম্মদ মাহবুবুল ইসলামের হাইকোর্টে আদেশ দেন। সেই সাথে বেক্সিমকো গ্রুপের পাচার করার অর্থ ফেরত আনার নির্দেশক দেন এই আদালত।
কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে এই কোম্পানিটি দেশের ক্ষতি করলেও এই কোম্পানিতে নতুন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ ও পাচার করা অর্থ ফেরত আনার মাধ্যমে কোম্পানিটিকে সংস্কার করে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ব্যবসায়কে এক অনন্য মাত্রা দিতে এ কোম্পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ভবিষ্যতেও। এ কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের দুর্নীতি মুক্ত থাকার মাধ্যমে এই গ্রুপটি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারবে। যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক নতুন করে নিয়োগ করা হচ্ছে তাই এই গ্রুপটি বন্ধ করার কোন সম্ভাবনা আপাতত নেই।
জন সচেতনতার জন্য ব্লগটি শেয়ার করুন আপনার পরিজনের সাথে। ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে মন্তব্য জানান কমেন্ট বক্সে, পরবর্তি ব্লগ পড়তে বিজনেস ম্যানিয়ার নিউজলেটারটি সাবসস্ক্রাইব করুন।