ব্যবসায়ী Donald Trump আমেরিকা জয় করেছিল কিভাবে? Donald Trump Story In Bangla
নভেম্বর ৮, ২০১৬ এই দিন পুরো দুনিয়ার নজর ছিল আমেরিকার উপর। কেননা এই দিনই অনুষ্ঠিত হয় আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। আর বাঘা বাঘা সব বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে এইদিন এমন একজন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। যার না ছিলি কোন পলিটিক্স এর অভিজ্ঞতা না তিনি কোন পলিটিক্যাল ফ্যামিলি থেকে বিলং(belong) করতেন।
শুধু তাই না, ওনার নির্বাচনী ইস্তেহার ও ছিল বেশ কন্ট্রোভার্সিময়(controversial) । তিনি নিজে একজন অধিবাসী হলেও অধিবাসীদের প্রতি তিনি ছিলেন চরম বিদ্বেষপূর্ণ। এছাড়া মুসলিমদের প্রতিও বেশ বিদ্বেষপূর্ণ কথা তিনি বার বার বলেছিলেন। সেই সাথে তিনি ম্যাক্সিকো (Mexico) আর আমেরিকার (America) মধ্যে একটা প্রাচীর তুলে দেওয়ার ও প্রস্তাব আনেন। যাতে করে ম্যাক্সিকো থেকে কোন অধিবাসী আমেরিকায় আসতে না পারেন।
কথা বলছি আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর ব্যাপারে। যিনি একজন প্রেসিডেন্ট ছাড়াও একাধারে ছিলেন একজন বিজনেস ম্যান(businessman), টিভি পারসোনালিটি(Tv personality), একজন লেখক এমনকি একজন অভিনেতাও। তবে এত কিছুর পর ও ডোনাল্ড ট্রাম্প এর পুরো জীবনটাই ছিল বিতর্কিত।
জুন ১৪, ১৯৪৬ আমেরিকার নিউ ইওর্ক (New York) এ এদিন জন্মগ্রহণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাবা ফেরিড ট্রাম্প আর মা মেরি ট্রাম্পের চতুর্থ সন্তান ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জন্মের পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ছিলেন বেশ দুষ্টু আর চঞ্চল প্রকৃতির। একারণে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই ডোনাল্ড এর দুষ্টামিতে অতিষ্ঠ হয়ে তার বাবা মা তাকে নিউ ইয়র্কের মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। এরপর ১৯৬৪ সালে তিনি পেনসেলভেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে (Pennsylvania University) ভর্তি হন। সেখানে তিনি ইকোনমিক্স (Economics) নিয়ে পড়াশোনা করেন আর ১৯৬৮ সালেই তিনি তার গ্রেজুয়েশন(graduation) শেষ করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু মোটামুটি বেশ ধনী একটা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবা ছিল রিয়েল স্টেট(real estate) এর একজন বড় মাপের ব্যবসায়ী। আর তাই গ্রাজুয়েশন শেষ করেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বাবার বিজনেস এ যোগ দেন। তিনি তার বাবার থেকে ১ মিলিয়ন ডলারের মতো ঋণ নিয়ে বিজনেসটা নিজের মতো চালাতে শুরু করেন। আর বেশ ভালো ও করতে থাকেন। এতে খুশি হয়ে তার বাবা ১৯৭১ সালে পুরো বিজনেস এর দায়িত্ব ট্রাম্প এর কাঁধে তুলে দেন, তাকে চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব দেন। এর কিছু দিনের মাথাতেই ট্রাম্প তাদের পারিবারিক বিজনেস এলিজাবেথ ট্রাম্প এন্ড সন এর নাম সরিয়ে ট্রাম্প কর্পোরেশন রাখেন।
আর এখান থেকে তাদের বিজনেসটা একটু রূপ পরিবর্তন করতে শুরু করে। কেননা যেই প্রতিষ্টানটি আগে শুধু মধ্যবিত্তদের জন্য বাড়ি বা ফ্ল্যাট বানাতো তারা এবার লাক্সারিয়াস ফ্ল্যাট, হোটেল, রিসোর্ট বানাতে শুরু করে।
এছাড়াও ট্রাম্প ধীরে ধীরে ক্যাসিনো আর হোটেল ব্যবসাতেও পা রাখে। এমনকি ট্রাম্পের একটা নিজস্ব এয়ারলাইনস বিজনেস ও ছিল।
যদিও ট্রাম্পের বিজনেস লাইফের মতো তার ব্যক্তিগত লাইফটা এত মসৃণ ছিল না। অনেক বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পকে খোঁচা মেরে এটা বলে থাকেন যে ট্রাম্পের নারী রোগ রয়েছে। মানে সুন্দরী নারী বিশেষ করে মডেলদের প্রতি রয়েছে তার বিশেষ এক দূর্বলতা। আর এটা আমরা তার ব্যক্তিগত জীবনেও দেখতে পারি।
ট্রাম্প এখন পর্যন্ত তিন বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। যাদের প্রত্যেকেই ছিলেন এক একজন মডেল। ১৯৯৭ সালে ট্রাম্প ইভানাকে, ১৯৯৩ সালে মারালা ম্যাপলস্ কে আর ২০০৫ সালে এসে ম্যালিনিয়াকে বিয়ে করেন ট্রাম্প। তিন ঘরে তার ৫টির মতো সন্তান রয়েছে।
ট্রাম্পের নারী ক্যালেংকারি এর ঘটনার এখানেই শেষ নয়। এই অব্দি ট্রাম্পের নামে ২৬ জন নারী বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন। এমনকি তার নিজের স্ত্রী ও তার নামে ধর্ষণ মামলাও করে। যদিও প্রায় প্রতি বারই ট্রাম্প কোন না কোন ভাবে এসব থেকে ছাড় পেয়ে যায়।
এখানেই শেষ নয় ট্রাম্প ১৯৯৭ সালে তার প্রকাশিত বই দ্যা আর্ট ওফ কামব্যাকে (The Art of the Comeback) প্রিনসেস ডায়নাকে (Princess Diana) নিয়ে তার বিভিন্ন রোমান্টিক ফ্যান্টাসির কথাও খুব বাজে ভাবে তুলে ধরেন। শুধু তাই নয়, লেখক হিসেবেও ট্রাম্প খুব একটা সুবিধা করতে পারে নি। তার এক মাত্র বেস্টসেলার বইটি হলো দ্যা আর্ট অফ দ্যা ডিল (The Art of the Deal)। যদিও এই বইটা তিনি অন্য একজন রাইটারকে দিয়ে লিখিয়েছেন। তবে এখানে পুরো ক্রেডিট টাই ট্রাম্প নিজের করে নিয়ে নেয়।
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে মুভিতে ভালো অভিনয় এর জন্য বেস্ট এক্টর, বেস্ট সাপোর্টিং এক্টর কিংবা বেস্ট ক্যামিও এসব এয়ার্ড দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু ওর্স্ট সাপোর্টিং এক্টর বলেও কিন্তু একটা এওয়ার্ড দেওয়া হয় সবথেকে বাজে অভিনয় এর জন্য, অস্কার এর আগের রাতে। আর এই এওয়ার্ড ট্রাম্প পান ১৯৯০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত তার প্রথম মুভি গোস্ট ক্যান্ট ডু ইট (Ghost Can’t Do It) এর জন্য। যদিও ১৯৯০ থেকে শুরু করে ২০১১ এই কয়েক বছরে ট্রাম্প ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫টা মুভিতে কাজ করেছেন। এসবের মধ্যে ট্রাম্প আরো দু বার ওরস্ট এক্টর এর খেতাব পান। শুধু তাই না, আমাদের বহুল পরিচিত মুভি হোম এলোন টু (Home Alone 2) তেও ট্রাম্পের ক্যামিও ছিল। যদিও পরে এটা মুভি থেকে রিমুভ করে দেওয়া হয়।
এছাড়াও ট্রাম্প দ্যা এপ্রেন্টিস এবং সেলিব্রেটি এপ্রেন্টিস নামে দুটি আলাদা আলাদা টিভি রিয়েলিটি শো হোস্ট করেন। ২০০৪ থেকে ২০১৫ সাল অব্দি এই দুটি রিয়েলেটি শো টিভিতে চলে। এই রিয়েলিটি শোতে পার্টিসিপ্যাট(participate) করা বিভিন্ন অল্প বয়সী মেয়েদেরকেই ট্রাম্প নানাভাবে হ্যারাজমেন্ট(harassment) করতো।
যদিও ২৬ জন নারীর বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা যে এর থেকেও অনেক বেশি তা কিন্তু সহজেই বোঝা যায়। শুধু তাই না, আমাদের সকলের পরিচিত টুয়াইলাইট (Twilight) খ্যাত অভিনেত্রী ক্রিস্টেন স্টুয়ার্ট (Kristen Stewart) ও কিন্তু বেশ কয়েকবার ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হ্যারেজমেন্ট এর অভিযোগ তুলেছিল।
এখানেই শেষ নয় ১৯৮৫ থেকে ২০২০ এই ৩৫ বছরে ট্রাম্প প্রায় ২৫টির মতো টিভি সিরিজে নিজের ক্যামিও দিয়েছে। এর মধ্যে কিন্তু আমাদের সবার পরিচিত WWE ও রয়েছে।
অবাক করার মতো বিষয় হলেও ২০০৭ আর ২০০৯ সালে আমাদের সকলের পছন্দের WWE এর রেসেল ম্যানিয়ার বেশ কয়েকটা এপিসোডেও ট্রাম্পকে দেখা যায়।
অনেক বিশেষজ্ঞদের মতো ট্রাম্প একজন বুড়ো বাচ্চা। বয়স্ক একজন ম্যাচিউর(mature) মানুষ হলেও যার কাজগুলো কোন বাচ্চার থেকে কম নয়। আর এই কথার সত্যতা আমরা দেখতে পাই ট্রাম্পের গোটা প্রেসিডেন্সি(presidency) সময়কাল জুড়ে।
২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও এর আগেও কিন্তু ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৪ ও ২০১২ সালে প্রায় ৪ বার ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করেন। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় তিনি বারাক ওবামাকে (Barack Obama) ফেইক প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেন।
ট্রাম্পের ভাগ্য বদল হয় ২০১৫ সালে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর। কেননা তার পরের বছরই তিনি নমিনেশন পান আর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিতও হন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পরেও পুরো সময়টা জুড়ে নানা রকম বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ আসে স্বজনপ্রীতির। প্রেসিডেন্ট হবার পর পরই হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন বড় বড় পদে তিনি তার সন্তানদের বসান।
এছাড়াও তার প্রেসিডেন্ট আমলের পুরো সময়টা জুড়েই নানা সময় তিনি ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ নানা রকম কথা বলেন। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান সহ বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় ঢুকতে দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও ইরান সব বেশ কিছু দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরো জোরদার করা হয়।
এছাড়াও নিজে একজন অধিবাসী হলেও ট্রাম্প ছিলেন একজন অধিবাসী বিদ্বেষী। ট্রাম্পের পরিবার যেখানে নিজেরাই ১৮৮৫ সালে জার্মানি থেকে আমেরিকাতে আসে। সেখানে তিনি তার বিভিন্ন ভাষনে এটা বলেন যে আমেরিকাতে যত ক্রাইম হয়, যত রোগ হয় এর পিছনে একমাত্র দায়ী বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অধিবাসীরা।
এছাড়াও তিনি তার প্রেসিডেন্সির সময়কালে বেশ কিছু বড় বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে অনেক বেশি সুবিধা দেন। এর মধ্যে ফেসবুক (Facebook) ও ছিল। যদিও পরে এই অভিযোগ ছিল যে ভুল নিউজ ছড়িয়ে মানুষকে ম্যানুপুলেট করে ট্রাম্পকে নির্বাচনে জিতাতে ফেসবুক বেশ ভূমিকা পালন করে।
শুধু তাই নয় ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট আমলের বিভিন্ন সময় দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। নানা সময় পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ করারও হুমকি দেন। সর্বশেষ নির্বাচনে বাইডেন (Biden) নির্বাচিত হলে ট্রাম্প এই নির্বাচনকে বানোয়াট আর ফেইক নির্বাচন বলে আখ্যা দেন।
যদিও সাম্প্রতিক সময় ট্রাম্প আবার পলিটিকালি বেশ সরব হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে আমেরিকার সামনের নির্বাচনে বাইডেনের সাথে আবার ট্রাম্প ও মুখোমুখি হতে পারেন। তাহলে কি তিনি আবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন? সে উত্তরও আমরা অদূূর ভবিষ্যৎ এই জানতে পারব। কিন্তু একটা কথা আমরা সবাই জানি যে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসলে হয়তো বিশ্ববাসী আরো উদ্ভট ঘটনার সাক্ষী হতে পারবে।
প্রিয় দর্শক আজ এই অব্দি। আগামী ব্লগে আমরা আসবো এমনই কোন বিষয় নিয়ে। সেই অব্দি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সত্য আর ন্যায়ের পথে থাকুন। সেই সাথে থাকলো পরবর্তী ব্লগ দেখার আমন্ত্রণ। চাইলে আমাদের বাকি ব্লগগুলো ঘুরে আসতে পারেন। আর এ ধরণের ব্লগ পছন্দ করলে, আমাদের নিউজলেটারটি Subscribe করতে ভুলবেন না।