George Soros : এক রাতেই ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড কে দেউলিয়া করেছিলেন যিনি
মার্ভেল এর থেনোস (Thanos) ক্যারেক্টারের সাথে তো আপনারা সবাই কম বেশি পরিচিত। কেমন লাগবে যদি বলা হয় আমাদের পৃথিবীতেই একজন রিয়েল লাইফ থেনোস রয়েছে। একজন ব্যক্তি যার একার সাথেই রয়েছে রাশিয়া (Russia), চীন (China), ভারতের (India) মতো বড় বড় দেশের শত্রুতা। বিভিন্ন দেশের সরকাররা যাকে ভয় পায়৷ যিনি কিনা এক দিনেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন পুরো ব্রিটেনের অর্থনীতিকে! নিজেকে গড ভাবতে পছন্দ করা কে এই ব্যক্তি? কেন একজন ইহুদি হওয়া সত্ত্বেও খোদ ইসরাইলিরা তাকে অপছন্দ করে? আজকের ব্লগে আমরা জানবো এই ধন কুবের জর্জ সোরোস (George Soros) ও তার কুখ্যাত ওপেন সোসাইটি সম্পর্কে।
জর্জ সোরোস জন্মগ্রহন করেন ১৯৩০ সালের ১২ই আগস্ট, হাংগেরির (Hungary) সুন্দর শহর বুদাপেস্টে (Budapest)। তার বাবা তিভাদার সোরোস ছিলেন পেশায় একজন উকিল। পেশায় একজন উকিল হলেও বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে তার জ্ঞানের পরিধি ছিল ব্যাপক। তিনি ছোট থেকেই সোরোসকে এসব বিষয়ে আগ্রহী করে তোলেন।
এরপর আসে ১৯৪৪ সাল, এমন সময় জার্মানি (Germany) হাঙ্গেরী আক্রমন করে বসে। নির্বিচারে ইহুদিদের হত্যা করতে থাকে। এসময় সোরোস এর বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পেতে সরোস এর বাবা নিজেদের খ্রিস্টান হিসেবে পরিচয় দেওয়ার জন্য ভুয়া কাগজ পত্র তৈরি করে। এতে করে প্রাণে বেঁচে যায় সরোসসহ তার পুরো পরিবার। কিন্তু এমন সময় ভয়ানক একটা কাজে জড়িয়ে পরতে হয় শিশু সোরোস কে। তার কাজ ছিল শহর ঘুরে ঘুরে নিজেরই খেলার সাথী, পরিচিত ইহুদীদের নাৎসি বাহিনির হাতে তুলে দেওয়া। নাৎসি বাহিনি অনেক সময় জর্জের সামনেই সেই সব ইহুদিদের গুলি করে হত্যা করতো।
১৯৯৮ সালে সোরোসর একটি ইন্টারভিউ (interview) টিভি চ্যানেলে লাইভ হয়। ইন্টারভিউ এ হোস্ট সোরোসকে এই ভয়াবহ ঘটনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, জর্জের উত্তর পুরো পৃথিবীকেই নাড়িয়ে দেয়। সোরোস জানায় যে “এটা আমার জন্য একটি সুখকর ঘটনা ছিল। নিজেকে আমার শক্তিমান হিসেবে মনে হচ্ছিল। কেননা আমি যার দিকেই ইশারা করছিলাম নাৎসি বাহিনিরা তাকেই গুলি করে হত্যা করছিল”। যদিও জর্জ এরপর ইহুদিদের ত্রান কর্তা হিসেবে কাজ করে আসছে এবং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের তিনি এখন অন্যতম কারিগর।
প্রিয় পাঠক, সোরোসের এই একটা মাত্র ঘটনা থেকেই কিন্তু আমরা তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে একটা বেশ ভালো ধারণা পাই।
এরপর ১৯৪৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে সোরোস লন্ডনে (London) চলে আসে। এসে ভর্তি হয় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে (School of Economics)। মূলত জীবনের এই সময়টাতে এসেই সোরোস অর্থের মূল্য বুঝতে শুরু করে। এসময় নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য সোরোস রেস্টুরেন্টের ওয়েটার হিসেবে কাজ করে এমনকি মাঝে মাঝে ট্রেনের কুলি হিসেবেও কাজ করত । অন্যদিকে তার সহপাঠীরা বেশ আরাম আয়েশ করে পড়ালেখা করতো। এ ঘটনাগুলো সোরোস এর মনে ব্রিটিশদের ব্যাপারে বিরাট দাগ কাটে। এ ঘটনা প্রবাহই তাকে পরবর্তী The man who can broke the bank of England খেতাব এনে দেয়ার পথ তৈরি করে দেয়।
পড়াশোনা শেষ করে সোরোস একজন ট্রেডার হিসেবে তার ক্যারিয়ার শুরু করে। ধীরে ধীরে ব্যাংক, বন্ড, ইনভেস্টমেন্ট এই ব্যাপারগুলো আয়ত্তে আনে সোরোস। এরপর ১৯৭৩ সালে সরোস নিজের হেইজড ফান্ড (Hedge fund) খোলেন। হেইজ ফান্ড গুলোর কাজ হচ্ছে বিভিন্ন ধনী পরিবার থেকে ফান্ড কালেক্ট করে সেগুলোকে বিভিন্ন ব্যাবসায় ইনভেস্ট করে প্রফিট লাভ করা।
শুরুর কিছু দিনের মাথাতেই সোরোস এর হেইজ (Hedge fund) ফান্ড প্রতি বছরে ৩০% করে রিটার্ন আনতে শুরু করে। এমনকি কোন কোন বছর সেটা বাড়িয়ে ৬০% অব্দি গিয়েছিল৷
১৯৭০ থেলে ২০১০ এই ৪০ বছর বিশ্বের সব বড় বড় ইনভেস্টরদের নাম নিলে সোরোস এর নাম সর্বদাই শীর্ষ ১ কিংবা ২ এ থাকতো। ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসেব অনুযায়ী জর্জ সোরোস এখন অব্দি আয় করেছেন প্রায় ৮৬ বিলিয়ন ডলার।
তবে বর্তমানে সোরোস এর সম্পত্তির পরিমান মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। কেননা এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার ডোনেট করেছেন। বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি কিনা নিজের আয়ের এত বড় একটা অংশ ডোনেট করেছেন।
প্রিয় পাঠক এখন আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে এমন দানশীল একজন মানুষকে নিয়ে কেন এত গুজব। তাহলে চলুন এবার জর্জ সোরোস জীবনের কালো অধ্যায়ের দিকে আলোকপাত করা যাক।
ভিডিও শুরুর দিকেই আমরা বলেছিলাম যে জর্জ সোরোস এর মনে ব্রিটিশদের প্রতি একটা ক্ষোভ ছিল। আর এই ক্ষোভ থেকেই তিনি ভয়ানক কাজ করে বসেন। যেই কাজের কারণে তিনি মাত্র এক রাতে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার আয় করেন।
সাল ১৯৯০, বাজারে পাউন্ডের অবস্থা বেশ শোচনীয়। আর এরই সুযোগ নেয় সোরোস। তিনি বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট ১০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড কালেক্ট করেন। এরপর ব্রিটিশ ব্যাংক থেকে এই ডলার দিয়ে পাউন্ড কেনেন, এরপর সেই পাউন্ড তিনি বেঁচে দিয়ে জার্মান ইউরো (Euro) কেনেন। এতে করে সোরোসের দেখা দেখি আরও অনেকে তাদের রিজার্ভ এ থাকা পাউন্ড বিক্রি করা শুরু করে। এতে করে বাজারে হুট করে চাহিদার থেকে অনেক বেশি পরিমানে পাউন্ড এর সাপ্লাই চলে আসে। এর ফলে পাউন্ডের ধ্বস নামে। ব্রিটিশ ব্যাংক শেষ পর্যন্ত এই ধ্বস আটকানোর জন্য কম দামে পাউন্ড কেনা শুরু করে। আর এরই মধ্য দিয়ে সোরোস আয় করে ফেলেন প্রায় ১ .৫ বিলিয়ন ডলারের প্রফিট। আর তার নামের সাথে যুক্ত হয় The man who can broke the bank of England ট্যাগ।
নিজের স্বার্থের জন্য সোরোস অন্য দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করতে কখনো পিছপা হন নি।
২০১০ সালের এশিয়ার (Asia) অর্থনৈতিক ধ্বসের পিছনেও হাত রয়েছে এই সোরোসের। তার ইশারাতে একই সাথে ইন্দোনেশিয়া (Indonesia), মালয়েশিয়া (Malaysia), থ্যাইল্যান্ড (Thailand), ফিলিপাইন (Philippine) এবং হংকং (Hong Kong) এর অর্থনীতিতে ধ্বস নামে। সেই ধ্বস এর পরিমান এতটাই ভয়াবহ ছিল যে এখন অব্দি অনেক দেশ সেখান থেকে পুরোপুরি রিকভার (recover) করতে পারে নি।
শুধু তাই নয় ! ২০১৩ সালের জাপানের অর্থনীতিতে যে ভয়াবহ ধ্বস নামে তার পিছনেও ছিলো সোরোস।
আপনারা আগেই জেনেছেন সোরোস তার মোট আয় থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার ইতোমধ্যে ডোনেট (donate) করেছেন। আর এই ডোনেটটা তিনি করেছেন ১৯৯৩ সালে চালু হওয়া তার কুখ্যাত ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনে (Open Society Foundations)।
এই ফাউন্ডেশনটি ইতোমধ্যেই ১৮ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে প্রায় ৭০টি দেশে।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের মনে একটা প্রশ্ন আসতেই পারে যে নিজের নামে ফাউন্ডেশন করে সেখানে টাকা ডোনেট করা কি আর এমন খারাপ কাজ করে। বিশ্বের অনেক শীর্ষ ধনী এমনকি বিল গেটস (Bill Gates) ও নিজের নামে ফাউন্ডেশন খুলে সেখান আফ্রিকাসহ (Africa) বিশ্বের অনেক দেশে সাহায্য পাঠিয়ে থাকে।
কিন্তু এখানেই রয়েছে আসল সমস্যা। আপনি যদি ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনে নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করেন দেখতে পারবেন যে তারা তাদের ওয়েবসাইটে একটা সেকুলার আর লেবারেল পৃথিবী তৈরি করার অঙ্গীকার দিলেও তাদের অন্যতম লক্ষ হলো সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
শুধু তাই নয় সোরোস LGBTQ মুভমেন্ট এর একজন একটিভ ফান্ডদাতা। LGBTQ মুভমেন্ট হলো এমন একটি মুভমেন্ট যেটি লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার এবং ইন্টারসেক্সুয়ালদের অধিকার আদায়ের জন্য করা হয়ে থাকে।
প্রিয় পাঠক আগেই বলে রাখি তৃতীয় লিঙ্গ এবং ট্রান্সজেন্ডার এক নয়। প্রথমটা একটা জন্মগত শারিরীক অবস্থা আর অন্যটি কৃত্রিম উপায়ে অপারেশনের মাধ্যমে মানুষ করে থাকে। পৃথিবীর কোন ধর্মেই এই সমকামীতা আর ট্রান্সজেন্ডারকে সাপোর্ট করে না।
প্রিয় পাঠক কিছু দিন আগে বাংলাদেশে একটি বেসরকারী ইউনিভার্সিটি ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি হয়তো আপনাদের সকলের জানা। ইউনিভার্সিটি সম্প্রতি OSUN (ওসুন) বা Open Society University Network এর সাথে এক সাথে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে এটিই হবে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে প্রথম ইউনিভার্সিটি যারা কিনা OSUN এর সাথে যুক্ত হয়েছে। আর এই OSUN হলো মূলত জর্জ সোরোস এর ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের একটি অঙ্গ সংগঠন।
OSUN মূলত বিশ্বের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি কে আর্থিক ডোনেশন করে থাকে। যা তারা পরবর্তিতে খরচ করবে স্কলারশিপ ও রিসার্চ এর পেছনে। ইউনিভার্সিটি গুলো এই ডোনেশনটা পায় এই শর্তে যে তারা OSUN এর সাথে মিলে ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের মতাদর্শকে ছড়িয়ে দেবে। যা সেকুলার ও লিবারেল সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বললেও ইতোমধ্যেই আপনারা জেনেছেন এটার মূল লক্ষ্য আসলে কি।
শুধু তাই না, আরো বলা হয়ে থাকে সমগ্র বিশ্বে ইচ্ছামত নিজের প্রোপ্যাগান্ডা ছড়ানো সোরোস গোপন সংগঠন ইল্যুমিনাতি এর সদস্য। যারা বিভিন্ন ভাবে এই গোটা বিশ্বকেই নিজেদের কন্ট্রোলে আনতে চায়।
প্রিয় পাঠক আপনার কি মনে হয় সোরোস একজন দানশীল ব্যক্তি? নাকি তার এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করার পিছনে রয়েছে অন্য কোনো উদ্দেশ্য। নিজের স্বার্থের জন্য বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ধ্বস নামিয়ে দেওয়া ৯২ বছর বয়সী এই ব্যক্তির মূল উদ্দেশ্যই বা কি? নাকি তিনিও অন্য কোন ভয়বাহ শক্তির হাতের পুতুলমাত্র?
প্রিয় পাঠক এই উত্তর খুঁজে বের করতে হবে আপনাকেই। কমেন্টে জানান আপনার মতামত। এই ব্লগটি ভালো লাগলে লাইক দিতে ভুলবেন না। এমনই আরো ব্লগ পেতে Business Mania নিউজলেটারটি Subscribe করে আমাদের সাথেই থাকুন। দেখা হচ্ছে পরের ব্লগে, ধন্যবাদ।