নগদ কি আসলেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ? Nagad Digital Banking Present Situation | Business Mania
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নগদ (Nagad)! নগদ (Nagad) অ্যাকাউন্টে যাদের টাকা আছে, তাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে সকল টাকা তুলে নেবার। ঠিক এমনটাই গুঞ্জন উঠেছে সম্প্রতি। ব্যাপারটি কতটুকু সত্য? আদৌ কি নগদের (Nagad) সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে? নগদের (Nagad) আসল মালিক কে? নগদ (Nagad) কি এতদিন মিথ্যাচার করে এসেছে আমাদের সাথে নানা বিষয়ে? আজকের পোস্টে জানব বিতর্কিত এই MFS কোম্পানি সম্পর্কে।
নগদ (Nagad) মূলত তার যাত্রা শুরু করে ১১ নভেম্বর ২০১৮ সালে। তবে নগদ (Nagad) আনুষ্ঠানিকভাবে সার্ভিস দেওয়া শুরু করে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ। স্বাধীনতা দিবসের সাথে মিল রেখেই এ-দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের যাত্রা শুরু করে নগদ (Nagad)। MFS সেক্টরে ২৮% মার্কেট শেয়ার নিয়ে নগদ (Nagad) এখন দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে তাদের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি, যারা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ট্রান্সেকশন (Transaction) করে থাকে।
বর্তমানে এই কোম্পানিটি পরিচালিত হচ্ছে ওয়েভ টেকনোলজি লিমিটেড (Wave Technology Limited) এর পক্ষ থেকে। গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ, ই-মানি (e-Money) সৃষ্টিসহ প্রতিটি কার্যক্রমই বেসরকারি এ কোম্পানির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সংগৃহীত অর্থের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণও করছে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি (Third Wave Technology)। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডাক বিভাগ না জানিয়েই থার্ড ওয়েভ টেকনোলজি (Third Wave Technology) নগদ লিমিটেড (Nagad Limited) এর নাম পরিবর্তন করে।
নগদ ও সরকারি সহযোগিতা
নগদ (Nagad) তৎকালীন হাসিনা সরকারের সহযোগিতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (Central Bank) কাছ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স পেতে সহায়তা করার জন্য সাবসিডিয়ারি কোম্পানি (Subsidiary Company) গঠন করতে চেয়েছিল, যা আজও সম্ভব হয়নি। সহায়ক সংস্থা গঠন করতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) নগদের (Nagad) অন্তর্বর্তীকালীন লাইসেন্স ৬ বার নবায়ন করেছে। শুরুতে নগদের (Nagad) ৫৫% শতাংশ শেয়ার ডাক বিভাগের (Post Office) বলে প্রচার করা হলেও, তা ডাক বিভাগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।
নগদের (Nagad) প্রতিষ্ঠাতা ও CEO হলেন তানভীর আহমেদ মাশুক (Tanvir Ahmed Mishuk)। বর্তমানে তিনি নগদের (Nagad) ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে (Management Department) কাজ করছেন। শুরুতে নগদের (Nagad) মালিকানায় যারা ছিলেন, তাদের অনেকে ছেড়ে দেয়ায় মালিকানায় আওয়ামী লীগের (Awami League) দুই জন সংসদ সদস্য যুক্ত হন—নাহিম রাজ্জাক (Nahim Razzaq) এবং রাজী মোহাম্মদ ফখরুল (Razi Mohammad Fakhrul)। বর্তমানে নগদের (Nagad) মোট নয়জন পরিচালক রয়েছেন, যার মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং বাকি তিনজন যুক্তরাজ্য (UK), কানাডা (Canada) ও সিঙ্গাপুরের (Singapore) নাগরিক।
বিতর্কিত ঘটনা ও নগদের বর্তমান অবস্থা
২০২১ সালে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং (International Leasing) সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন পিকে হালদার (PK Halder)। এই ঘটনার সাথে নগদের (Nagad) প্রতিষ্ঠাতা তানভীর আহমেদ মাশুকের (Tanvir Ahmed Mishuk) নামও জড়িয়ে পড়ে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং (International Leasing)-এর তৎকালীন এমডি প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ আনেন মাশুকের বিরুদ্ধে। যদিও মাশুক এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
২০২১ সালের ৩০ আগস্ট, সিরাজগঞ্জশপ ডটকম (Sirajganjshop.com) নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নগদ (Nagad) থেকে ৪৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেশি অর্থ লোপাটের ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জশপ (Sirajganjshop)-এর গ্রাহকদের হিসাব ব্যবহার করে এই অর্থ হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। একসঙ্গে অস্বাভাবিক মাত্রায় রিফান্ড রিকোয়েস্ট (Refund Request), একই হিসাব দিয়ে একাধিকবার রিফান্ড রিকোয়েস্ট, পণ্য ডেলিভারির পরও রিফান্ড রিকোয়েস্টের মাধ্যমে এই অর্থ লুট করা হয়। কিন্তু নগদ (Nagad) এখানেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রায় ১৩০০০ অ্যাকাউন্ট (Account) বন্ধ করে দেয়।
নগদ বন্ধের গুঞ্জন
এই বছরের জুনের শুরুতে, নগদ (Nagad) দেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ব্যাংক (Digital Bank) হিসাবে লাইসেন্স পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের (Bangladesh Bank) পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী (Mohammad Shahriar Siddiqui) ঢাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (Central Bank) কার্যালয়ে নগদের (Nagad) প্রতিষ্ঠাতা সিইও তানভীর এ মাশুকের (Tanvir A Mishuk) কাছে ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্সের (Digital Banking License) অনুলিপি হস্তান্তর করেন। কিন্তু জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে হাসিনা সরকার পদত্যাগ করলে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের (Bangladesh Bank) গভর্নরসহ অনেক কর্মকর্তা পদত্যাগ করায়, আগের সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট নগদের (Nagad) ভবিষ্যৎ নিয়েও সংকট সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের (Bangladesh Bank) অনেক কর্মকর্তা মনে করছেন, পরবর্তী গভর্নর এসে নগদের (Nagad) বাতিল ঘোষণা করতে পারেন এবং ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স (Digital Banking License) রদ হতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিগত সরকারের দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রভাব এবং নানা দুর্নীতির কথা।
যদিও নগদ (Nagad) কতৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে চলা বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে তারা আইনি পদক্ষেপ নেবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) থেকে লাইসেন্স পাওয়ায় ডিজিটাল ব্যাংক (Digital Bank) চালু করতে প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া থেকে চায়ের দোকান—সর্বত্র গুঞ্জন চলছে, নগদের (Nagad) গ্রাহকদের কষ্টার্জিত অর্থ কি গায়েব হয়ে যাবে?
এজন্যই, নগদের (Nagad) গ্রাহকদের চলতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে।
তো কেমন লাগল আমাদের আজকের পোস্ট? কমেন্টে জানাতে পারেন আপনার মূল্যবান মতামত। পোস্টটি ভাল লেগে থাকলে লাইক ও শেয়ার করতে ভুলবেন না! পরবর্তী পোস্ট দেখতে চোখ রাখুন বিজনেস ম্যানিয়ায়।