ভারতের সেভেন সিস্টার্স হারানোর ভয়ের কারন? Importance of Seven Sisters To India | Business Mania
ঘটনার সূত্রপাত মূলত ড.ইউনুস এর এনডিটিভি (NDTV) তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার কে কেন্দ্র করে! বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় বাংলাদেশ সর্তক কিনা এবং প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর ইউনুস বলেছিলেন,”শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশ অস্থিরতা র ভেতর থেকে গেলে প্রতিবেশী রাষ্ট্র এমন কি সেভেন সিস্টার্স ও হুমকির মধ্যে পড়বে…!
সেখান থেকেই মূলত উঠে আসেচাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য! সাবেক সরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুর জামান বাবর এর সেই ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা র সাথে সেভেন সিস্টার স্বাধীন হওয়ার সংযুক্তি সহ বেশ কিছু তথ্য! সাম্প্রতিক ফেনী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ঘটে চলে বন্যা পরিস্থিতি যে প্রতিবেশী ভারতের অপরাজনৈতিক কূটকৌশল, এটা এদেশের একজন আপামর নীরিহ জনগনের ও বুঝতে বাকি নেই! এই বন্যার ভয়াবহ তা দেখে বিক্ষোভে ফুলে ফেঁপে উঠেছিলো এদেশের প্রতিবাদী জনতা! ভারত বিরোধী স্লোগান,আর সেভেন সিস্টার থাকবে না, স্লোগানে মুখরিত হয়েছিলো দেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনা গুলো…! কিন্তু কি এই সেভেন সিস্টার আর কেনই বা এর এত গুরত্ব সবার কাছে। বিজনেস ম্যানিয়ার আজকের ব্লগ পোস্টে থাকবে তারি বিস্তারিত।
সেভেন সিস্টার্সের ইতিহাস ঘাটতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে সেই ১৯৭২ সালে। সে বছর ত্রিপুরার একজন বিখ্যাত সাংবাদিক, জ্যোতি প্রকাশ সাইকিয়া(Jyoti Prasad Saikia) একটি রেডিও টক-শোতে ভারতের অরুণাচলপ্রদেশ, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা রাজ্যকে সেভেন সিস্টার্স নাম দেন। এই সাতটি রাজ্যের উপরে তিনি একটি বইও লেখেন যার নাম ‘ল্যান্ড অফ সেভেন সিস্টারস‘। মূলত এরপরই এই নামটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে! সেভেন সিস্টার্স ভারতের মোট আয়তনের প্রায় ৭ ভাগের মতো! এ সাতটি রাজ্য চতুর্দিক দিয়ে অন্যান্য রাষ্ট্রের স্থলভাগ দিয়ে বেষ্টিত। ফলে ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের সাথে এ রাজ্যগুলো যোগাযোগ রক্ষা করা হয় মাত্র ৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি সরু পথ দিয়ে! দেখতে অনেক টা সরু মুরগির গলার মতো বলে এর নাম হয়েছে চিকেন নেক(Siliguri Corridor)। এছাড়াও ধর্ম, ভূরাজনৈতিক অবস্থান সামাজিক স্বকীয়তায় প্রতিটি রাজ্য ই স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল! তবে এই সরু চিকেন নেক দিয়ে ভারত শাসন করলেও সেভেন সিস্টারস মুলত অরক্ষিত! একটি স্বকীয় স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য সেভেন্থ সিস্টারস এর রোজকার আন্দোলনের চাপ তো আছেই, ভারতের উপর! তাই ভারত চায় ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে এ সাতটি রাজ্যের সাথে সড়ক, রেল ও নৌপথে ট্রানজিট স্থাপন করবে, যাতে এই সাত রাজ্যের প্রতি তাদের প্রবল অধিপত্য থাকে! এমন চুক্তিতে রাজিও হয়েছিলো সদ্য বিদায়ী আওয়ামীলীগ সরকার! তবে বাস্তব কথা হলো এই চুক্তি তে রাজে হলে দিনে দিনে ভারতের ই এদেশের উপর আধিপত্য বাড়তো, বাংলাদেশের লাভ হত না কিছুই!
আগেই বলেছি মাত্র ৬০ কিলোমিটার এর চিকেন নেক দিয়ে ভারত যোগাযোগ রক্ষা করে সেভেন সিস্টাস এর সাথে! ভৌগোলিক ভাবে ভারতের স্থল সিমান্তে কিছুটা চীন,,কিছুটা মায়ানমার, বাকিটা বাংলাদেশ,,এভাবেই ঘিরে রেখেছে সেভেন্থ সিস্টারস, তবে, দুইটা কারনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ, এক. বাংলাদেশের সাথে ভারতের সীমান্ত বরাবর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট রেখেছে! যেখান থেকে ভৌগোলিক পরিবহন সম্ভব! দুই,,ভারত, বিশেষ করে আওয়ামী শাসন আমলে চাইলেই যেমন খুশি তেমন ব্যাবহার এদেশের ওপর চালাতে পারে! রিমোট কন্ট্রোল গাড়ির মতোই, এক রকম!
এবার চলুন আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেই! সেভেন্থ সিস্টারস এর অন্যতম, নাগা ল্যান্ড,৷ ভারতের স্বাধীনতা পাওয়ার এক দিন আগে, ১৯৪৭ সালের ১৪ ই আগস্ট এক বিপ্লব করেছিলো, সফল হয় নি! ১৯৫০ এর দিকে বিপুল সমর্থন থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের চাপে ভারত নাগাল্যান্ড কে নিজেদের অঙ্গরাজ্যে করে ফেলে! ত্রিপুরা, মনিপুর, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয়, আরুণাচল প্রদেশ সব গুলো প্রদেশেই যেই রেভুলেশন ভারত কেন্দ্রীয় ভাবে দমিয়ে রেখেছে, যতটা বোঝায় ভারত মিডিয়ার কল্যানে, আসল চিত্র কিন্তু এমন টা নয়! বরং এই সপ্ত কন্যার, স্বাধীণ হওয়ার বিপ্লব কিন্তু ক্রমে ক্রমে আর ব্যাপকতা পেয়ে চলছে! যদিও কিছু বিপ্লব অযাচিত ফল এনেছে,সম্প্রতি মায়ানমার ২২ জন বিদ্রোহী কে তুলে দিয়েছে ভারতের হাতে! তবুও লড়াই কিন্তু চলছেই!!
এখন, গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটা সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ভারত ক্যানো সেভেন্থ সিস্টারস হাত ছাড়া করতে চায়,না!
এই সাতটি রাজ্যের মোট আয়তন ২,৬২,১৮৪ বর্গকিলোমিটার! আদিবাসী, উপজাতি বৈচিত্রের সংমিশ্রণ,সংস্কৃতি, ধর্ম এক না হলেও নানা ক্ষেত্রেই রয়েছে তাদের মিল। এসব রাজ্যের অধিকাংশ মানুষই উপজাতি ও আদিবাসী! সম্প্রতি ভারতের স্বাধীনতা দিবসে মণিপুর রাজ্যে কয়েক হাজার মানুষ নাগা পতাকা উড়িয়ে স্বাধীন ভূমির পক্ষে সমর্থন দিলে বিষয়টি বিশ্ববাসীর নজরে আসে এবং ভারত চিন সীমান্তে যখনই উত্তেজনা দেখা দেয় তখনই আলোচনায় উঠে আসে আবার ও শিলিগুড়ি করিডোর!(চিকেন নেক করিডোর)!৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২২ কিলোমিটার প্রসস্ত পশ্চিমবঙ্গের এই করিডোরটি ভারতের লাইফ লাইন। এই করিডোর হাতছাড়া হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশটির বাকি অংশের সড়ক ও রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই চিন চাইছে এই করিডোরটি ভেঙে দিতে। অন্যদিকে ভারত দ্বিগুন নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক গুরুত্ব রয়েছে এই ক্ষুদ্র করিডোরের। নেপাল ও ভূটাও শিলিগুড়ি করিডোরের উপর নির্ভরশীল। ভৌগলিক অবস্থানের জন্য চিনের খুবই কাছাকাছি এই করিডোর। ২০১৭ সালে ডুগলাম সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরার পর শিলিগুড়ি করিডোরে ভারত বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করে। একই সময় চিনা সেনাবাহিনীও সিকিমের কাছাকাছি তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। ওই সীমান্ত থেকে শিলিগুড়ির করিডোর আকাশপথে ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে। চিন চাইছে দূরত্ব আরও কমিয়ে আনতে। বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। শেখ হাসিনার পতনের পর বেশ তাই চিন্তিত ভারত!
এখানেই শেষ নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষমতাধর হিসাবে চিন এর একক অধিপত্যের সবচেয়ে প্রবল বাধা কিন্তু এই ভারত ই! তাই কোনো উপায়ে সেভেন্থ সিস্টারস এর বিদ্রোহ যদি সফল হয়, বাংলাদেশ যদি ভারত কে সমর্থণ না করে, তাহলে সবচেয়ে বেশী লাভবান হবে চিন! কারন সামরিক ভাবে সিকিম সিমান্তে একদম ই দুর্বল হয়ে পড়বে ভারত ই! হা বন্ধুগন,এত কথা এই ভিডিওর শুরু থেকে যে সেভেন্থ সিস্টারস নিয়ে বলা হলো, এই সাত অঙ্গরাজ্য কিন্তু শুরু থেকেই ভারতের সাথে ছিলো না! এই সাত রাজ্য কোনো না কোনো ভাবে শ্বাসন করতো স্থানীয় রাজারা! তাই রাজ শাসন হোক বা স্থানীয় শাসনের প্রতি এক রকম প্রগাড় আকুতি লক্ষা,করা যায়!
তবে ভু-রাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ এর অবস্থান বরাবর ই গুরুত্বপূর্ণ এক যায়গায়! আওয়ামী সময়ে অতিরিক্ত ভারতঘেষা মনোভাব কখন ও কখন ও চীন এর থেকে আমাদের কিছুটা দুরে ঠেলেও দিয়েছিলো! তবে সেভেন্থ সিস্টারস এর নিয়ন্ত্রণ পূর্ণ রুপে ভারত তখন ই নিতে পারতো যদি তারা,এদেশের ভেতর থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারতো! সামরিক দিক থেকেও ভারত তখন বেশি শক্তিশালী তে রুপান্তরিত হতো! তবে এই মুহুর্তে আশা করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভারত ঘেষা রাষ্ট্রনীতির পথে হাটবে না হয়তে বাংলাদেশ! এই এই বিপুল জনগোষ্ঠী, আর সাত অঙ্গরাজ্য নিয়ে তাই ভারত সরকারের কপালে চিন্তার রেখে প্রকট হতেই পারে!
অন্যদিকে ভারত সেভেন্থ সিস্টারস এর নিয়ন্ত্রণ হারালে সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যাবে চীন! আর চীন তখন মিয়ানমার এর উপর ও একরকম নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারবে!
তাই ভৌগোলিক অবস্থান হোক বা স্থলসীমা, অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে, বাংলাদেশের কার্যক্রম এর ওপর এক রকম সর্তক দৃষ্টি ভারতের রাখতেই হচ্ছে , চিন্তার ছলে! এটা নিশ্চিত!
তাই তো বাংলাদেশের ভারতের প্রভুত্তের দাস হয়ে নয়,,বরং ভারত ই ক্ষেত্রবিশেষে এ বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল, এবং একারনেই প্রতিবেশী রা আজন্ম আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে! যাতে করে এ দেশের বুক চিরে তাদের অযাচিত নিয়ন্ত্রণ তারা বহাল তবিয়াতে বহাল রাখতে পারে……! কখন ও কখন ও সফল ও হয়েছে তারা! তবে এদেশের প্রতি এত তাবেদারীর জন্য যতগুলো কারণ রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম বড় কারন এই সেভেন্ সিস্টারস!
জন সচেতনতার জন্য ব্লগটি শেয়ার করুন আপনার পরিজনের সাথে। ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে মন্তব্য জানান কমেন্ট বক্সে, পরবর্তি ব্লগ পড়তে বিজনেস ম্যানিয়ার নিউজলেটারটি সাবসস্ক্রাইব করুন।