Boycott আসলে কতটুকু কাজে দিচ্ছে? Effect of Israeli Products BAN
অক্টোবর ১৩, ২০২৩। ইসরাইলের আগ্রাসনের কড়া জবাব দিতে সেদিন সকালে প্রায় ১ হাজার রকেট নিক্ষেপ করে স্বাধীনতাকামী হামাস (Hamas) যোদ্ধারা। সেই সাথে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা প্রাচীর ভেদ করে ইসরাইলে ঢুকে পরে হামাস যোদ্ধারা।
আর তারপর ইসরাইলের আগ্রাসন আরো ভয়ানক রূপ ধারন করে। মুখে হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধের বুলি আওড়ালেও ইসরাইলের লক্ষ্য যে গোটা গাজা আর শান্তি প্রিয় ফিলিস্তিনীদের (Palestine) নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া, তা কিন্তু সহজেই বোঝা যায় এতে ।
আর সে কারণে শুরু থেকেই ইসরাইলের এই পাল্টা অভিযানের লক্ষ্য ছিল নিরপরাধ ফিলিস্তিনিরা।
অভিযানের শুরু থেকে এখন অব্দি ৬ মাসে ইসরাইল হত্যা করেছে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি নিরপরাধ ফিলিস্তিনিকে। আর সেই সাথে চলছে নির্বিচারে শিশু হত্যা। ফিলিস্তিন জাতিকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিতে ইসরায়েলের এই অভিযানের অন্যতম টার্গেট শিশুরা।
১ বছর বয়সী শিশু কি ১০ বছর বয়সী শিশুরা সবাই টার্গেটে পরিনত হয়েছে এই পাশবিক ইসরাইলী বাহিনীর। প্রায় প্রতিদিনই ১০০রো বেশি শিশু ইসরাইলী বাহিনীর আক্রমনে মারা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন যাবত এত বিশাল গনহত্যা পরিচালনা করতে অস্ত্র এর থেকেও সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার সেটা হলো অর্থনৈতিক সাপোর্ট (Support)। আর এখানেই আসছে ইসরাইলীয় পণ্য বয়কটের (Boycott) কথা।
প্রিয় পাঠক প্রথমে আসি ঠিক কি কারণে আমাদের ইসরায়েলের পণ্য বয়কট করা উচিৎ!
সাম্প্রতিক সময়ে একটা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে বেশ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখায় যে আপনি যখন আপনার পকেটের টাকা দিয়ে পেপসি (Pepsi) যেটা একটা ইসরাইলীয় পণ্য কিনছেন। তখন আপনার এই টাকাই শেষ মেষ হাতবদল হয়ে চলে যাচ্ছে ইসরাইলের সেনাবাহিনীর কাছে। যে টাকা খরচ করেই তারা মিসাইল বানাচ্ছে। আর তা ফেলা হচ্ছে সাধারণ ফিলিস্তিনীদের উপর।
এভাবে আপনার টাকা দিয়েই ইসরাইলিরা হয়ত এই ধংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতি নিয়ত।
এবার আসা যাক বাজারে ঠিক কোন কোন ইসরাইলীয় পণ্য চলছে যেগুলোর ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিৎ।
প্রথমেই আসে ইসরাইলকে সরাসরি সাপোর্ট করা পেপসিকো (PepsiCo) আর কোকাকোলা (Coca-Cola) কোম্পানির নাম এই দুটো কোম্পানি সরাসরি ইসরায়েলের না হলেও। স্বয়ং ইসরাইলের সরকারের এদুটো কোম্পানিতে বিশাল অংকের শেয়ার রয়েছে।
পেপসিকো আর কোকাকোলার যে পণ্যগুলো বাজারে রয়েছে সেগুলো হলো পেপসি (Pepsi), কোক (Coke), মিরিন্ডা (Mirinda), ফ্যান্টা (Fanta), সেভেন আপ (7up), স্প্রাইট (Sprite), মাউটেন্ড ডিউ (Mountain Dew) এছড়া খাবার পানির ব্রান্ড একুয়াফিনা (Aquafina) আর কিনলে (Kinley) ও পেপসিকো আর কোকাকোলার আন্ডারে (under) পরে।
এরপরে আসে সুইডিশ কোম্পানি নেসলে (Nestle) যেটা নানাভাবে ইসরাইলের সেনাবাহিনীকে চকলেট ও অন্যান্য মুখোরোচক খাবার খুবই অল্প দামে দিয়ে থাকে। যাতে অভিযান পরিচালনার সময় তাদের মনোবল ঠিক থাকে।
নেসলের উল্লেখযোগ্য কিছু পণ্য হলো নেসকেফে (Nescafe), ম্যাগি (Maggi), কিটক্যাট (Kitkat)।
মিডিয়া চ্যানেলগুলোর মধ্যে সি এন এন (CNN), দি টাইমস (The Times), ন্যাশনাল জিওগ্রাফি (National Geography)এই চ্যানেলগুলো ইসরাইলের প্রোপাগান্ডা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকে। সেই সাথে ইসরাইলের পক্ষে জনমত তৈরী করতে আর ফিলিস্তিনের ভুল প্রমান করতেও নানা রকম অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রকাশ করে থাকে এরা।
এছাড়াও বিশ্বের বড় বড় তিনটি ফুড চেইন কোম্পানিও সরাসরি ইসরায়েলেকে এই গনহত্যায় সাপোর্ট করে আসছে এরমধ্যে রয়েছে স্টারবাকস (Starbucks), ম্যাকডনাল্ড (McDonald’s) আর কে এফ সি (KFC)। এছাড়া কে এফ সির অধীনে থাকা পিজ্জা হাট (Pizza Hut) ও ইসরাইলকে সাপোর্ট করে থাকে।
এছাড়াও আমাদের বহুল ব্যাবহৃত প্যাম্পার্স (Pampers) এর মাদার কোম্পানি হলো আভাগো। যা একটা ইসরাইলের কোম্পানি।
এছাড়াও পন্ডস (Ponds), লেইস (Lay’s), ওরিও (Oreo), সানসিল্ক (Sunsilk), ডাভ (Dove), সার্ফ এক্সেল (Surf Excel) এমনকি আমাদের বহুল ব্যবহৃত বাটাও (Bata) কিন্তু ইসরায়েল সরকারকে সাপোর্ট করে থাকে।
প্রিয় পাঠক উপরের লিস্ট দেখে আপনারা এটা অন্তত বুঝলেন যে বিশ্বে টপে থাকা বেশিরভাগ কোম্পানিই ইসরাইলকে সাপোর্ট করে থাকে অথবা সরাসরি ইসরাইলের কোম্পানি। কিন্তু কেন ইসরায়েল কে সাপোর্ট করা কোম্পানি গুলো বাজারে সর্বাধিক প্রচলিত।
এর পিছনে রয়েছে মূলত দুটো কারণ। প্রথমত এই কোম্পানিগুলোর ব্যান্ডের পরিধি এত বিশাল যে আপনি চাইলেও এদের কোন না কোন পণ্য না ব্যাবহার করে থাকতে পারবেন না। আর দ্বিতীয়ত এরা একটা কোম্পানির অধীনেই আলাদা আলাদা নামে অনেকগুলো সাব কোম্পনি খুলে থাকে। এবং সেগুলোকে আলাদা নামেই ব্রান্ডেং করে থাকে।
যেমন সেভেন আপ, স্প্রাইট , ফান্টা কিংবা মিরিন্ডা যে ঘুরে ফিরে পেপসিকো আর কোকাকোলার আন্ডারে রয়েছে এগুলো কিছু বছর আগেই আমাদের সকলের অজানা ছিল। যেমন বর্তমানে বহুল ব্যাবহৃত খাবার পানির ব্রান্ড একুয়াফিনা আর কিনলেও যে পেপসিকো আর কোকাকোলার আন্ডারে রয়েছে এটা সম্পর্কেও আমাদের অনেকেই তেমন একটা জানে না।
এইসব কোম্পানির টপে থাকার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো মার্কেট ডমিনেশন ও পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা।
যেমন আপনি চান আর না চান আপনি কোন ভাবেই গুগল (Google) ইউজ না করে থাকতে পারবেন না। আর এই গুগল কিন্তু সরাসরি ইসরায়েলের বাহিনীকে প্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন ধরণের সাপোর্ট (Support) আর ট্রেইনিং(Training) দিয়ে থাকে।
এছাড়াও বিশ্বজুড়ে মানুষ কোন জিনিসগুলো বেশি সার্চ করছে বা ঠিক কি ধরনের পণ্য তারা কনজিউম করতে চায় এই ইনফোগুলো(Info) ও গুগল ইসরাইলকে সরাসরি সরবরাহ করে থাকে। এতে করে ইসরাইল খুব সহজেই এমন সব প্রোডাক্ট তৈরী করতে পারে যেগুলো কনজিউমারদের টপ চয়েজে থাকে।
গুগল ছাড়াও একই ভাবে ফেইসবুকও ইসরাইলকে সহায়তা করে থাকে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লিখা যেকোন পোস্টের বা নিউজের রিচ ফেইসবুক ইচ্ছা করে কমিয়ে দেয়। যাতে করে চাইলেও এসব সত্য মানুষের কাছে বেশি না পৌছায়।
এছাড়াও আমাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় এইচপি (HP) আর ইন্টেল (Intel) ও সরাসরি সাপোর্ট করে থাকে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে। শুধু তাই নয় সাম্প্রতিক সময়ে ডেইল প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার ডিসকাউন্টে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ৫০ হাজারের বেশি ল্যাপটপ (Laptop) ইসরাইলের সেনাবাহিনীকে দিয়েছে।
এইভাবেই বাজারে থাকা বিভিন্ন ইসরাইলের আর আমেরিকান পণ্য এই গনহত্যায় ইসরাইলকে সাহায্য করে আসছে।
এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে। বিশাল বিশাল কোম্পানির এই পণ্যগুলো বয়কট করে আসলেই কি কোন লাভ আছে।
উত্তর হ্যাঁ আছে। আপনাকে এই ইসরায়েলের পণ্যগুলো বয়কট করা উচিৎ মূলত দুটো কারণে প্রথম নৈতিকতা। আমরা নানা কারণে হয়তো আমাদের ফিলিস্তিনি সাহায্য করতে পারছি না। কিংবা করা সম্ভব না। কিন্তু তাই বলে আমরা কখনোই ইসরাইল বাহিনীর হাতে গনহত্যা চালানোর জন্য অস্ত্র তুলে দিতে পারি না।
কেননা হয়ত আমাদেরই টাকায় তারা অস্ত্র কিনে সেগুলো গনহত্যা চালাবে। শুধু তাই না, কোন ধর্মেই আসলে এমন গনহত্যাকে সাপোর্ট করে না। তাই অন্য ধর্মের মানুষেরও উচিত ইসরাইলের পণ্য বয়কট করে নিজেদের নৈতিকতার পরিচয় দেওয়া।
আর দ্বিতীয় কারণ হল ইসরাইলের বিরুদ্ধে এই বয়কট মুভমেন্ট আসলেই কাজে দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ম্যাকডনাল্ডস, স্টারবাকস, কে এফ সি এর রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
শুধু তাই না। আমাদের দেশেও কোকাকোলা তাদের বিক্রি বাড়ানোর জন্য দিন কে দিন কোকাকোলার প্রাইজ কমিয়েই যাচ্ছে। তবুও লাভ হচ্ছে না।
এছাড়াও পণ্য বিক্রি বাড়ানোর জন্য তারা নতুন নতুন পণ্য বাজারে আনছে। যেমন কিছু দিন আগেই স্প্রাইট তাদের নতুন ফ্লেভার মিন্ট (Mint) বাজারে লঞ্চ করেছে কাস্টমার (Customer) ধরার জন্য।
প্রিয় পাঠক ইসারাইলের বিরুদ্ধে এই বয়কট মুভমেন্ট কেবল শুরু। কেননা আর যাই হোক আমরা কোন ভাবেই কোন গনহত্যার পক্ষে দাড়াতে পারি না। সেটা যেই হোক না কেন। এটাই আমাদের নৈতিকতা। মানুষ হিসেবে আমাদের মানবিকতা।
প্রিয় পাঠক আজ এ অব্দি। আমাদের পছন্দের এসব ব্রান্ডগুলোর পিছনে ঠিক কিভাবে একটা গনহত্যাকে সাপোর্ট করছে তা এখন আমাদের সকলেরই কাছেই প্রায় উন্মুক্ত।
ইসরায়েলের বাহিনি তাদের অভিযানের মাধ্যমে গোটা একটা জাতিকে শেষ করে দিচ্ছে। আর আমাদের পরিচিত এই ব্রান্ডগুলো এই কাজে তাদের সাহায্য করে যাচ্ছে।
এখন অব্দি তারা কত মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে কত শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে , কত মা বাবার বুক খালি করেছে কত পরিবার শেষ করে দিয়েছে তা কারোই অজানা না। ইনফেক্ট এই ব্রান্ডগুলোর ও না। তাই আমাদের সকলের উচিৎ এই বয়কট মুভমেন্ট এ এগিয়ে আসা।
প্রিয় পাঠক আজ এই অব্দি ৷ আগামী ব্লগে আমরা আসবো এমনই নতুন কোন বিষয় নিয়ে। সেই অব্দি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সত্য আর ন্যায়ের পথে থাকুন সেই সাথে থাকলো পরবর্তী ব্লগ পড়ার আমন্ত্রণ। চাইলে আমাদের অন্য ব্লগগুলো দেখে আসতে পারেন। আর এ ধরণের ব্লগ পছন্দ করলে, আমাদের নিউজলেটারটি Subscribe করতে ভুলবেন না।