কি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক চুক্তির? Future of Bangladesh -India Agreement। Business Mania
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক দিগন্তের সূচনা হতে চলেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলোর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা, এবং প্রভাব নিয়ে জনমনে গভীর উদ্বেগ এবং প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, এসব চুক্তির সম্ভাব্য প্রভাব এবং কার্যকারিতা নিয়ে সাধারণ মানুষের সন্দেহ পোষণ করেন । আগের সরকারের অধীনে স্বাক্ষরিত চুক্তিগুলো সম্পর্কে জনগণের মধ্যে বিস্তর অসন্তোষ এবং অভিযোগ বিদ্যমান।
জনগণ মনে করছে, অনেক চুক্তিই দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে এবং এসব চুক্তির ফলে দেশের অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং পরিবেশে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা নতুন সরকারের বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে।
এই পরিস্থিতিতে , নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এসব চুক্তির ভবিষ্যৎ কী হতে পারে, তা নিয়ে বিজনেস ম্যানিয়ার ব্লগ পোস্ট ।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সময়ের সঙ্গে এই সম্পর্কের গতি পরিবর্তিত হয়েছে। গত এক দশকে আমরা দেখেছি যে, কূটনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী হলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে থেকেই গিয়েছে ।
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি এর একটি প্রধান উদাহরণ। তিস্তা নদী বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এই বিষয়টি আগের সরকারের যথাযথ গুরুত্ব পেয়েছে কি না , সন্দেহজনক । তিস্তার পানি না পাওয়ার ফলে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা চরম সংকটে পড়ে, যা দেশের কৃষি উৎপাদন ও কৃষকদের জীবনযাত্রার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। নতুন সরকার এই চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন করবে এবং তিস্তার পানির সুষ্ঠু বিতরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
তিস্তা চুক্তি শুধুমাত্র একটি উদাহরণ, আরো অনেক চুক্তি রয়েছে যেগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে, CEPA (Center for European Policy Analysis) চুক্তি বা কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এই চুক্তি মূলত বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য তৈরি হলেও, অনেকের মতামত, এটি ভারতের পক্ষে একটি সুবিধাজনক চুক্তি।
CEPA (Center for European Policy Analysis) চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের কাঁচামাল এবং সস্তা শ্রম ভারতের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানের লাভের মেশিনে পরিণত হতে পারে, যা দেশের নিজস্ব শিল্পকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিশেষ করে, অনেক শিল্পপতি এবং অর্থনীতিবিদ মনে করেন, এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের বাজারে প্রতিযোগিতা অসম হয়ে যাবে এবং দেশের শিল্প খাত সঙ্কটের মুখে পড়বে।
এই চুক্তির প্রসঙ্গ শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। CEPA চুক্তির মধ্যে শিল্পক্ষেত্র, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। ভারতের বৃহৎ বাজারে প্রবেশাধিকার লাভের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের শিল্প এবং ব্যবসা কি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। যা দেশের নিজস্ব শিল্পকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এছাড়া, প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলো নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন রয়েছে । সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে হওয়া প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগের সরকারের অধীনে করা এসব চুক্তিগুলোর ফলে ভারতের সামরিক সরঞ্জামের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দেশের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পকে পিছিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নতুন সরকার এই চুক্তিগুলো পুনঃমূল্যায়ন করলে , দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেতে পারে ।
নীল অর্থনীতি চুক্তি, দেশের সামুদ্রিক সম্পদ এবং তার ব্যবহার নিয়ে তৈরি, সেটিও নতুন সরকারের জন্য কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ। বঙ্গোপসাগরের বিশাল সম্পদের ব্যবহার কতটা দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে পেরেছে এবং এসব সম্পদের উপর ভারতের প্রভাব কতটা দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। আগের সরকারের বিভিন্ন চুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ সকল চুক্তিগুলোর পুনঃমূল্যায়ন , দেশের সামুদ্রিক সম্পদের পরিমাণ তরান্বিত করবে।
বিদ্যুৎ খাতেও ভারতীয় সহযোগিতার চুক্তিগুলোর আর্থিক শর্তাবলী নিয়ে বিতর্ক চলছে। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি স্থিতিশীলতা এনে দিলেও, এর আর্থিক শর্তাবলী দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে নতুন সরকার কি নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করবে,তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
পাশাপাশি আসে সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ভারতীয় সহায়তার কথা । দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য কতটা রক্ষা করা হয়েছে সরক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা কতটুকু উন্নত হয়েছে জানা প্রয়োজন । বিশেষ করে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় সড়ক ও রেল যোগাযোগের উন্নয়নে ভারতীয় সহায়তার প্রভাব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে । জনগণ পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে এবং তারা আশা করছে, নতুন সরকার তাদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে, নতুন সরকার আসলেই জনগণের চাওয়াগুলো পূরণ করতে পারবে? বাংলাদেশের জনগণ এখন একটি সুষ্ঠু এবং সার্বভৌম বাংলাদেশ দেখতে চায়।
তবে, এই পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের সহায়তা ও সরকারের যোগ্য ও বিচক্ষণ পরিকল্পনা । তাহলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের চাওয়াগুলো পূরণ করতে সক্ষম হবে । দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নতুন সরকার ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো পুনঃমূল্যায়ন করবে । বাংলাদেশের নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে পুনর্গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসেছে।
ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক চুক্তিগুলোর বিষয়ে জনগণের উদ্বেগ একটি নতুন দৃষ্টিকোণ উন্মোচন করেছে। দেশের ভবিষ্যৎ এখন নতুন নেতৃত্বের হাতে, এবং এই পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত আশাবাদী।
পরিশেষে বলা যায়, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় সতর্কতামূলক হলেও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে। ঐতিহাসিকভাবে, ভারত ও বাংলাদেশ বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভাগাভাগি করে এসেছে। তবে, নতুন সরকারের অধীনে আগের চুক্তিগুলো, যেমন তিস্তা চুক্তি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব (যেমন CEPA) পুনর্বিবেচনা হতে পারে।
নতুন সরকার এই চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে, যা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে মানানসই করার জন্য পুনরায় আলোচনা হতে পারে। তবে, উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদবিরোধী কার্যক্রম, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে, কারণ এই বিষয়গুলো আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রেখে অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তি যেমন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে পারে । বাংলাদেশের জনগণের মধ্যেও ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, যা নতুন সরকারের ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই উদ্বেগগুলো সমাধান করতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। সারসংক্ষেপে, এই সম্পর্কটি সহযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি নতুন সরকারের অগ্রাধিকারগুলোর প্রতিফলন ঘটিয়ে কিছু পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিবর্তনের এই সময়ে, বাংলাদেশের নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং জনগণের জন্য সামনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক , ভবিষ্যতে কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, এবং আঞ্চলিক অবস্থানে বাংলাদেশের উন্নয়নমূলক ভবিষ্যতের উপর । সঠিক সিদ্ধান্তগুলোই বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী, স্বাধীন, এবং সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে, সরকারকে জনগণের প্রত্যাশা ও প্রয়োজন গুলো পূরণ ও দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে।
ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে মন্তব্য জানান কমেন্ট বক্সে, পরবর্তি ব্লগ পড়তে বিজনেস ম্যানিয়ার নিউজলেটারটি সাবসস্ক্রাইব করুন।