৩ ট্রিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য: প্রযুক্তি দুনিয়ার নতুন রাজা! | Rise of NVIDIA | Business Mania
আপনার জন্ম যদি ৯০ এর দশকে হয়ে থাকে আর কম্পিউটার গেমের প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে গ্রাফিক্স কার্ড এর নাম উচ্চারণ করলে প্রথমেই যেই কোম্পানিটির নাম মাথায় আসবে সেটা হলো এনভিডিয়া (NVIDIA)।
ধীরে ধীরে টাকা জমিয়ে এনভিডিয়ার গ্রাফিক্স কার্ড কিনা ছিল পুরাই একটা ড্রিম কাম ট্রু হবার মতো একটা ব্যাপার। তবে বর্তমানে শুধু গেমার না, যারা গ্রাফিক্স কিংবা ভিডিং এডিটিং এর মতো কাজগুলোর সাথে জড়িত তাদের সকলের কাছেই প্রথম পছন্দ হলো এনভিডিয়ার তৈরী গ্রাফিক্স কার্ড।
এছাড়াও যারা টুকটাক শেয়ার মার্কেটের ব্যাপারে খোজ রাখে তারাও এনভিডিয়া কোম্পানিটির নাম শুনে থাকবে। কেননা এই বছর ২০২৪ সালের ১৮ই জুন, এনভিডিয়া বিশ্বের বড় বড় সব টেক জায়ান গুগল, আমাজন, অ্যাপেল কে কাটিয়ে উঠে এসেছে এক নাম্বার খেতাব অর্জন করেছে বিশ্বের সবথেকে বেশি এক্সপেন্সিভ প্রতিষ্ঠান হিসেবে। যার বর্তমান ভ্যালুয়েশন প্রায় ৩.৩৪ ট্রিলিয়ন ডলায়। এনভিডিয়ায় বিশ্বের প্রথম কোম্পানি যাদের মার্কেট ভ্যালুয়েশন ৩ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
শুধু তাই নয় এনভিডিয়াকে যদি একটা দেশ হিসেবে ধরা হয় তাহলে এনভিডিয়া হবে বিশ্বের ৭ম ধনী দেশ।
Business Maniar আজকের ভিডিওতে আমরা জানবো এই এনভিডিয়া সম্পর্কে। সেই সাথে এনভিডিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জেনশন হাং সম্পর্কেও, যাকে কিনা বলা হয় টেক ইন্ডাস্ট্রির টেইলর সুইফট।
এনভিডিয়া সম্পর্কে জানার আগে চলুন জেনে আসা যাক কম্পিউটার এর একটু ব্যাসিক সম্পর্কে। কম্পিউটার এর মূলত তিনটা কম্পাউন্ড আছে সহজ ভাষায়। ইনপুট আউটপুট আর সিপিউ। এই সিপিউ ই কম্পিউটার এর যাবতীয় সব হিসাব নিকাশ থেকে শুরু করে সবধরণের টাক্স করে থাকে। কিন্তু সিপিউ এর একটা সমস্যা হলো এরা একটা সময়ে কেবল মাত্র একটা টাক্সই সম্পন্ন করতে পারে। যেটা ভারী ভারী কাজ করার ক্ষেত্রে কম্পিউটারকে অনেক স্লো করে দেয়।
আর এই সমস্যারই সমাধান করতে এগিয়ে আসে তিন বন্ধু জেনশন হাং, ক্রিস মালেহোস্কি আর ক্রুটিস প্রিম। যাদের হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে এনভিডিয়া।
তাদের আইডিয়াটা ছিল খুব সিম্পল। এমন একটা চিপ বা ডিভাইস বানানো যেটা সিপিউ এর প্যারালাল হয়ে কাজ করে সিপিউ এর কাজের গতিকে তরান্বিত করবে৷ যদিও তারা প্রথম টার্গেট করে গেমিং ইন্ড্রাস্টিকে কিন্তু তাদের এই আইডিয়া পরে শুধু আর গেমিং ইন্ড্রাস্টিকেই বদলে দেয় নি, এআই, অটোমোবাইল, ক্রিপ্টোকারেন্সি, আর গ্রাফিক্স এনিমেশন ইন্ড্রাস্টিকেও পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
তবে এনভিডিয়া এর প্রতিষ্ঠাতা জেনশন হাং এর জীবন কিন্তু শুরু থেকেই স্মুথ ছিল না।
জেনশন জন্মগ্রহন করে ১৯৬৩ সালে ফেব্রুয়ারীর ১৭ তারিখে তাইওয়ানের একটা নিম্নবিত্ত পরিবারে। জেনশনরা ছিলেন দুই ভাই। কিন্তু মাত্র ৯ বছর বয়সে জেনশনের বাবা মা তাকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেয় তার আংকেল আন্টির কাছে। যদিও জেনশনের আংকেল আন্টির অবস্থাও অতটা ভালো ছিল না।
আমেরিকাতে এসে ছোট জেনশন প্রথমে একটা টোবাকো ফার্ম এ শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে টয়লেট ক্লিনার হিসেবেও কাজ করে জেনশন। ১১ বছর বয়সে জেনশন আবার স্কুলে ভর্তি হয়। কিন্তু স্কুলেও মাইনোরিটি হবার কারণে তাকে অনেক বুলির শিকার হতে হয়। তবে জেনশনের একটা ভালো গুন ছিল। জেনশম ছোট থেকেই টেবিল টেনিস এ খুব ভালো ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই জেনশন তার স্কুলের টেবিল টেনিস টিমেও যুক্ত হয়।
কিন্তু জেনশনের কম্পিউটার এর প্রতিও ব্যাপক আগ্রহ ছিল। শিক্ষা জীবন শেষ করে সে AMD তে মাইক্রো-প্রসেসর ডিজাইনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এখানে চাকরির সুবাধেই জেনশনের সাথে পরিচয় হয় সান মাইক্রো সিস্টেম এ কর্মরত ক্রিস মেলহোস্কি আর কার্টিস প্রিম এর সাথে।
পরবর্তীতে তারা তিন জনের হাত ধরেই ১৯৯৩ সালের ৫ই এপ্রিল এনভিডা কোম্পানির যাত্রা শুরু করে। শুরু থেকেই তাদের পরিকল্পনা ছিল তারা নিজেরাই কোন চিপ ম্যানিফ্যাকচার করবে না। তারা শুধু ডিজাইন করবে। ম্যানিফ্যাকচার করার দায়িত্ব দেয় তারা তাইওয়ানের আরেকটা কোম্পানি TSMP কে।
যাত্রা শুরু প্রথম দুই বছরে এনভিডিয়া স্কয়ার ক্যাপিটাল থেকে প্রথমে ২ মিলিয়ন ডলার পরে ১৮ মিলিয়ন ডলারের ঋন নেয়। আর শুরু করে তাদের চিপ বানানোর কাজ।
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর এ তারা প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে NV1 Chip বাজারে আনে। যেটার মূল কাজ ছিল সিপিউ এর কাজের চাপ কমিয়ে সিপিউ এর কাজ প্যারালাল হিসেবে ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ করে প্যারালালি করা।
কিন্তু তাদের এই প্রডাক্টটি বাজারে মারাত্মকভাবে ফ্লপ করে। অবস্থা এমন এসে পৌছায় যায় এনভিডিয়ার কাছে মাত্র এক মাসের অর্থ ছিল তাদের কর্মীদের বেতন শোধ করার মতো।
এরপরো আরো একটা রিক্স নিয়ে ১৯৯৭ সালে NViDiA Riva 128 নামের আরো একটি চিপ তারা বাজারে আনে। যদিও কাজের দিক থেকে এটা বর্তমানের GPU ই এর মতই ছিল। কিন্তু তখনো তারা এটাকে GPU নামে পরিচিত করে নি।
তবে এবার এনভিডিয়ার পন্যটি বাজারে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মাত্র ৪ মাসের মাথায় তারা প্রায় ১০ লাখ ইউনিট NVIDIA Riva 128 সাল সেল করে।
এরপর থেকে প্রায় প্রতি বছরই তারা কোন না কোন চিপ বাজার জাত করতে থাকে। তবে এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে বাজারে আনা Ge Force 250 কে ধরা হয় ক্লাট ক্লাসিক হিসেবে। যেটাকে বিশ্বের প্রথম GPU বললেও ভুল হবে না।
পরবর্তী বছর গুলোতে তারা আরো কয়েকটি GPU আর গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে আনে। এরই মধ্যে ২০০০ সালে বাজারে আনা Geforce 2 ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। প্রায় ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ জেনারেট করে তারা এই বছর। এছাড়াও ২০০৪ সালে তারা সোনির প্লে স্টোর তৈরীর কাজ ও হাতে নেয়।
এরপর থেকেই তারাই গ্রাফিক্স কার্ড আর জিপিইউ এর মার্কেটে রাজ করতে শুরু করে। ২০০৬ সালে মার্কেট শেয়ার এর প্রায় ৬০%ই দখল করে এনিভিডিয়া। ২০১৫ সালে তারা বেড়ে দাঁড়ায় ৮০% এ। তারপর থেকে আর কোন বছরই সেটা ৮০% নিচে নামে নি।
তবে পরবর্তী সময়গুলোতে এনভিডিয়া বুঝতে পারে গেমিং মার্কেট এর থেকেও আরো বেশি সম্ভাবনাময় মার্কেট হলো এআই মার্কেট। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা ২০১৬ সালে নিজেদের বানানো DGX 1 নামের সুপার কম্পিউটার Open AI কে গিফট করে।
এর ফলে বিশাল বিশাল ডাটার যেই কাজগুলো করতে Open AI এর লাগতো ৬দিন। সেগুলো তারা মাত্রা ২ ঘন্টায় করে ফেলতে পারে। এরপর থেকে গোটা AI এর ফিল্ডে এনভিডিয়া এর প্রডাক্টগুলো ব্যবহৃত হতে থাকে।
এছাড়া একই বছরই তারা GTx 1080 আর GTx 1070 আরো দুটি গ্রাফিক্স কার্ড বাজারে আনে যেগুলো শুধু গেমিং ইন্ড্রাসটি নয়,গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং আর ক্রিপ্টো কারেন্সির মতো ফ্লিডগুলোতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনে।
তবে এনভিডিয়ার মার্কেট ভ্যালুয়েশন এ সবথেকে বেশি রাইজটা হয় AI এর কারণেই।
যেখানে ২০২২ সালেও চ্যাটজিপিট এর ঘোষণা আসার আগে এনভিডিয়ার মার্কেট ভ্যালুয়েশন ১ ট্রিলিয়ন ডলার এর কাছাকাছি সেখানে বর্তমানে ২০২৪ এর মাঝামাঝিতে এসে দাড়িয়েছে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার এরো বেশি।
যখন এনভিডিয়া তাদের প্রথম আইপিও লঞ্চ করে তখন একটা শেয়ার এর প্রাইজ ছিল ১২ ডলার করে। যা বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৫০০ ডলার।
এছাড়াও ২০২৩ থেকে ২০২৪ এ এনভিডিয়ার মার্কেট ভ্যালুয়েশন এ বেড়েছে প্রায় ৩৪৫%। যদিও অনেক ক্রিটিক্স এর মতো এনভিডিয়ার শেয়ারকেও ওভারহাইপড করা হচ্ছে টেসলার মতো। তবে মূলত এর পিছনে রয়েছে জেনশন হাং এর চমৎকার নেতৃত্ব আর পরিশ্রম।
রান্না করতে ভালোবাসা এই মানুষটার একটা চমৎকার উক্তি হলো তিনি কাজের জন্য প্রতিভাবান মানুষের তুলনায় পরিশ্রমী মানুষ খুজতে বেশি পছন্দ করেন। বিল গেটস এর পরে তিনিই প্রথম যাকে নিয়ে টেক দুনিয়া এত বেশি মাতামাতি করা হয়।
প্রিয় দর্শক আপনার কি ধারণা এনভিডিয়াকে নিয়েই আসলেই বেশী মাতামাতি করা হয়? আমাদের জানাতে ভুলবেন না। এছাড়া আপনার ব্যবহার করা এনভিডিয়ার গ্রাফিক্স কার্ডগুলো কি কি সেটাও আমাদের জানাতে পারেন। সেই সাথে, নেক্সট এ আর কি কি টপিকের উপর ভিডিও দেখতে চান, তাও জানাতে ভুলবেন না।
আমাদের আজকের ভিডিও এই অব্দি। । ভিডিওটি ভালো লাগলে লাইক দিন এবং কমেন্ট করুন।এরকম আরো ভিডিও দেখতে চাইলে, চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে বেল বাটন্টি প্রেস করে রাখুন। দেখা হবে নেক্সট কোন ভিডিওতে।