State Street – ব্যাংকিং দুনিয়ায় একচ্ছত্র অধিপতি | How State Street Controls Wallstreet ?
সুচনা
বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে আমরা প্রায়শই দেখতে পাই, পৃথিবীর প্রায় সবগুলো জানাশোনা ব্র্যান্ডের মালিকানা কিংবা শেয়ারহোল্ডারের তালিকায় ব্ল্যাকরক(Blackrock) অথবা ভ্যানগার্ডের(Vanguard) মতো কোম্পানিকে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, অর্থনীতির এই বাজারে সবকিছুর একচেটিয়া মালিকানা নিয়ে নেয়ার জন্য এই দুই কোম্পানিকে কম সমালোচনাও শুনতে হয়নি। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, পৃথিবীর অর্থনীতি ভ্যানগার্ড এবং ব্ল্যাকরকের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই হাজার সমালোচনা এবং বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় আরও একটি নাম উঠে আসার কথা, যা কোনও কারণে বাদ পড়ে গেছে সবখানে। এই কোম্পানিটি ব্ল্যাকরক এবং ভ্যানগার্ডের মতো একচেটিয়া ব্যবসাই করে বেড়াচ্ছে না, বরং এই একচ্ছত্র আধিপত্যের দৌড়ে এরা অংশ নিয়েছে অন্য কোম্পানিগুলোরও অনেক আগেই। বাস্তব বলে, দুটো কোম্পানি নয়, মূলত পুরো বিশ্বের অর্থনীতি বাঁধা পড়েছে তিনটি কোম্পানির কাছে। আজ আমরা কথা বলবো সেই তৃতীয় কোম্পানিটিকে নিয়ে, যাদের নিয়ে মিডিয়াপাড়ায় কথা তেমন একটা না হলেও, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান হিসেবে এদের পরিচিতি রয়েছে সবখানেই। আজ কথা বলছি আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান, স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশনকে (State Street Corporation)নিয়ে।
ইতিহাস
বিংশ শতাব্দী কিংবা উনবিংশ শতকে নয়, স্টেট স্ট্রিটের শেকড়ের সন্ধান খুজতে গেলে আমাদের ফিরে যেতে হবে দীর্ঘ ২৩১ বছর আগে, ১৭৯২ সালে। সেইসময় ম্যাসাচুসেটস(Massachusetts) অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ছিলেন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব জন হ্যানকক (John Hancock)। আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদারদের একজন হিসেবে পরিচিত এই মহান ব্যক্তির হাত ধরেই, আমেরিকার তৃতীয় চার্টাড ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়েছিলো, যার নাম ছিলো ইউনিয়ন ব্যাংক(Union Bank)। এই ইউনিয়ন ব্যাংক থেকেই আজকের স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশনের জন্ম।
প্রথমদিকে এই ব্যাংকের কার্যক্রম ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের ভিতরেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তবে সেইসময়েই ইউনিয়ন ব্যাংকের খ্যাতি ধীরে ধীরে অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। সেই সুখ্যাতি, আর জন হ্যানকক সাহেবের নাম জড়িয়ে থাকার সুবাদেই ১৮৬৫ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক তাদের ন্যাশনাল চার্টার্ড লাভ করে, আর এরপর থেকে এই ব্যাংক ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন ব্যাংক অফ বস্টন’ হিসেবে পরিচিত হয়, কারন সেইসময় ইউনিয়ন ব্যাংকের কর্মকান্ড ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বস্টন শহরেই চলতো।
সারাদেশে নিজেদের কর্মকান্ড চালানোর সুযোগ পাওয়ার পরপরই ইউনিয়ন ব্যাংক তাদের আরও একটি শাখা আমেরিকার ওয়াশিংটনে খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, কারন ততদিনে ব্যাংকটির সুনাম এবং ব্যবসায়ী মনোভাব, দুটোই উদার হতে শুরু করে। ১৮৯১ সালে এই ব্যাংক একটি মিউচুয়াল ফান্ড চালু করে, যার নাম রাখা হয় স্টেট স্ট্রিট ডিপোজিট এন্ড ট্রাস্ট কর্পোরেশন(State Street Deposit & Trust corporation)। প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পর এর নাম সংক্ষিপ্ত করা হয়, আর এর নতুন নাম হয় স্টেট স্ট্রিট ট্রাস্ট কোম্পানি(State Street Trust Company)।
১৯২৫ সালে স্টেট স্ট্রিট এবং ইউনিয়ন ব্যাংক এর মার্জিং সম্পন্ন হয়। নতুন প্রতিষ্ঠানটির নাম রাখা হয় ‘স্টেট স্ট্রিট’’, তবে ইউনিয়ন ব্যাংকের অনেক সুবিধাই এই নতুন প্রতিষ্ঠান পেতে শুরু করে। এই সুবিধাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয় ইউনিয়ন ব্যাংক এর শতবছরের খ্যাতি। নতুন প্রতিষ্ঠান দ্রুত আমেরিকার অর্থনীতিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে।
৬০ এর দশকে স্টেট স্ট্রিট আরও দুটি ব্যাংকের সাথে মার্জিং এর মাধ্যমে আমেরিকার অন্যতম ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ‘স্টেট স্ট্রিট ব্যাংক বিল্ডিং’ এর নির্মাণকাজ শুরু করে বস্টনে, যা পরবর্তীতে বস্টনের প্রথম বহুতল ভবনগুলোর একটি হিসেবে পরিচিতি পায়। প্রায় ৪৮০ মিটার লম্বা এই দালানটিও স্টেট স্ট্রিটকে কর্পোরেট দুনিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে।
৭০ এর দশক স্টেট স্ট্রিট এর ইতিহাসে এক নতুন মোড় এনে দেয়। এইসময়েই প্রতিষ্ঠানটি দেশের বাইরে নিজেদের শেকড় ছড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই লক্ষ্যেই ১৯৭২ সালে জার্মানের মিউনিখে স্টেট স্ট্রিটের প্রথম ইন্টারন্যাশনাল অফিস চালু হয়। এরপরের বছরই স্টেট স্ট্রিট একটি শক্তিশালী ডাটা রেকর্ড কিপিং সার্ভিস তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই কাজ করার জন্য তারা আইবিএম এর মতো প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় একশো অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়ে আসে এবং এই সেক্টরে তাদের নিয়োগ প্রদান করেন।
১৯৭৫ সালে স্টেট স্ট্রিট এর নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে অফিসে বসেন উইলিয়াম এগারলি। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার সাথে সাথেই স্টেট স্ট্রিট কমার্শিয়াল ব্যাংকিং এর পথ থেকে সরে এসে সিকিউরিটি প্রোসেসিং এবং বিভিন্ন ব্যবসাতে ইনভেস্টমেন্ট করার দিকে বেশি নজর দিতে শুরু করেন। কারন তার ধারণা ছিলো, ব্যাংকিং নয়, বুদ্ধিদীপ্ত ইনভেস্টমেন্ট এবং ফাইন্যান্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস ভবিষ্যতে স্টেট স্ট্রিটকে এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে। সেসময় আমেরিকার অর্থনীতি হুহু করে উপরের দিকে উঠছিলো, সুতরাং ক্যাপিটাল সিকিউরিটি সার্ভিসের চাহিদাও দিনে দিনে বাড়ছিলো। একইসাথে এমন সব সেবার দিকে ঝুকতে শুরু করেছিলো বিশ্ব অর্থনীতিও। আর এই মার্কেটের দিকেই উইলিয়াম এগারলির নজর পড়ে, আর এরই লক্ষ্যে স্টেট স্ট্রিট দুবাই(Dubai), টোকিও(Tokyo), লন্ডন(London), প্যারিস(Paris), ডাবলিন(Dublin), সিডনি(Sydney) এবং হংকং(Hong-Kong) এর মতো ব্যস্ততম শহরগুলোতে তাদের কর্মকান্ড শুরু করে।
উইলিয়াম এগারলির সেই সিদ্ধান্ত যে শতগুণ সঠিক, তা প্রমাণিত হয় ৯০ এর দশকে। এইসময় দেখা যায়, স্টেট স্ট্রিটের ব্যবসায়ের বেশিরভাগ লাভ কমার্শিয়াল ব্যাংকিং থেকে নয়, এটি আসছে সিকিউরিটি হোল্ডিং, একাউন্টিং এবং রেকর্ড রাখার মতো কাজ থেকে। স্টেট স্ট্রিট এই খাতগুলোতেই তাদের নজর রাখতে শুরু করে, এবং সেই লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে গ্লোবাল এসেট ম্যানেজমেন্ট এর জন্য ‘স্টেট স্ট্রিট গ্লোবাল এডভাইসর’ নামে কার্যক্রম শুরু করে। স্টেট স্ট্রিট এবার বাজারে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে আদাজল খেয়েই মাঠে নামে।
১৯৯৯ সালে স্টেট স্ট্রিট তাদের কমার্শিয়াল ব্যাংকিং সেক্টরটি সিটিজেন ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয়, কারন কমার্শিয়াল ব্যাংকিং স্টেট স্ট্রিটের বিজনেজ প্ল্যানে আর সবচেয়ে লাভজনক সেক্টর ছিলো না। এই সিদ্ধান্তের ফলে স্টেট স্ট্রিট আমেরিকার অন্যতম বড় ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানিগুলোর একটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, এবং একইসাথে তাদের কমার্শিয়াল ব্যাংকিং এর যাত্রাও শেষ হয়ে যায়।
স্টেট স্ট্রিটের বর্তমান
আমেরিকার সবচেয়ে বয়স্ক ব্যাংকগুলোর একটি হিসেবে পরিচিত স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশন আজ শুধু আমেরিকার নয়, বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম বড় প্লেয়ার। এদের হাতে রয়েছে এসেট ম্যানেজমেন্ট খাতের প্রায় ৩.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। স্টেট স্ট্রিটকে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাস্টোডিয়ান ব্যাংক হিসেবে ধরা হয়। কাস্টাডি এন্ড এডমিনিস্ট্রেশন খাতে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এসেট রয়েছে স্টেট স্ট্রিটের ম্যানেজম্যান্টে।
এছাড়াও দেশবিদেশের নানা ব্যবসায় ইনভেস্টমেন্টের মাধ্যমে, এবং সরাসরি প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারহোল্ডার হিসেবেও স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশন তাদের প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে সবখানে। টেসলা(Tesla), মাইক্রোসফট(Microsoft), এপল(Apple), মেটার(Meta) মতো টেকনোলজি নির্ভর প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে, পেপসি(Pepsi), কোকাকোলা(Coca-Cola), জনসন(johnson) এন্ড জনসনের মতো নিত্যকার জীবনের সাথে সম্পর্কিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোতেও রয়েছে স্টেট স্ট্রিটের অংশ। আমেরিকা যেই প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া প্রায় অচল, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতেও স্টেট স্ট্রিটের মালিকানা রয়েছে। আমেরিকার সবচেয়ে বড় অস্ত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান লকহিড মার্টিন(Lockheed Martin) থেকে শুরু করে হোম ডিপো(Home Depot), ওয়ালমার্ট(Walmart), মাস্টারকার্ড(Mastercard), ভিসা(Visa), এমনকি দেশটির পছন্দের ফাস্ট ফুড ব্র্যান্ড ম্যাকডোনাল্ডে(Macdonald) পর্যন্ত স্টেট স্ট্রিটের মালিকানা রয়েছে। আর এইজন্যই ব্ল্যাকরক, ভ্যানগার্ডের মতো স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশনকেও বলা হয়, ‘ A company too big to fall’!
স্টেট স্ট্রিটের অন্ধকার জগৎ
২৩১ বছর আগে যখন এই প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়েছিলো, তখন হয়তো কেউ কল্পনাও করেনি, একদিন এই ব্যাংক স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশনের নামে বিশ্ব কাপাবে। কল্পনার চাইতেও বড় পর্যায়ে পৌঁছানোর পিছনে যে প্রতিষ্ঠানটির শতবছরের অভিজ্ঞতা এবং যুগপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়া অনেক বড় কারণ, তা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু যাদের হাতে আমেরিকার মতো দেশের কর্পোরেট দুনিয়া জিম্মি, তাদের ইতিহাসের পাতাতেও রয়েছে বেশকিছু কালোদাগ।
কর্পোরেট দুনিয়ায় নিজেদের ক্ষমতা বাড়ানো এবং বহির্বিশ্বের অর্থনীতিতে অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পরিকল্পনা নেয় স্টেট স্ট্রিট। সেইজন্য ধীরে ধীরে স্টেট স্ট্রিট একের পর এক প্রতিষ্ঠান কিনে নিতে শুরু করে এবং দেখতে দেখতেই অন্যদের ধরাছোয়ার বাইরে চলে যায়। স্টেট স্ট্রিট এতো বড় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় যে, এর উপর যদি কখনো কোনও বিপদ নেমে আসে, সেই বিপদের ভার সইতে হবে আমেরিকার অর্থনীতিকেও। চোখের সামনে স্টেট স্ট্রিট অপ্রতিরোধ্যই নয়, হয়ে উঠে এক অজেয় প্রতিষ্ঠান।
অর্থের লোভে কোনরকম যাচাই–বাছাই না করেই লেনদেন করার অনেক উদাহরণ রয়েছে স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশনের নামে। ২০২৩ সালে এমনই একটি ঘটনা আলোচনায় নিয়ে আসে বিশ্বমিডিয়ায় তেমন একটা আলোচনায় না থাকা এই কোম্পানিকে। জানা যায়, কোনরকম যাচাই–বাছাই ছাড়াই তারা ৮.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি ট্রাঞ্জেকশন হতে দেয়, যা মূলত একটি পঞ্জি স্কিমের অর্থ বলে প্রমাণিত হয়। এরমম কাজকর্মে স্টেট স্ট্রিটের এহেন অবহেলা দেখানোর জন্য ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে পরবর্তীতে একটি মামলাও দায়ের করা হয়।
দি বিগ থ্রি এর অন্যতম অংশীদার স্টেট স্ট্রিট কে নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। রিপাব্লিকান প্রার্থী ভিভেক রামস্বামী স্টেট স্ট্রিট কে উদ্দ্যশ্য করে বলেন তারা প্রায় প্রতিটি বড় পাবলিক কোম্পানির বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার এবং তারা এসব কর্পোরেট বোর্ডগুলিতে নিজেদের তৈরি করা এজেন্ডা গুলিকে নিজস্ব স্বার্থে অপব্যবহার করে । দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন বিনিয়োগ তহবিলে স্টেট স্ট্রিট তাদের আধিপত্য ব্যবহার করে কর্পোরেশন গুলিকে তাদের পছন্দের পরিবেশগত, সামাজিক এবং শাসন নীতিগুলি মেনে চলতে বাধ্য করে।
বর্ণবাদী আচরণের জন্যও স্টেট স্ট্রিট কর্পোরেশকে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো ২০১৭ সালে। সেবার অভিযোগ উঠে, স্টেট স্ট্রিট নারী এবং কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীদের পুরুষ এবং শ্বেতাঙ্গ কর্মীদের চেয়ে কম বেতন প্রদান করে থাকে। অভিযোগটি আদালত পর্যন্ত গড়ায় এবং শেষপর্যন্ত সেই অভিযোগ সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়। মামলা থেকে নিজেদের সম্মান রক্ষা করতে স্টেট স্ট্রিট সেবার ৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে রাজি হয়। এই স্ক্যান্ডাল থেকে নিজেদের নাম বের করে আনতে, স্টেট স্ট্রিট ম্যানহাটনের বিখ্যাত ‘চার্জিং বুল’ মুর্তির সামনে ‘ফিয়ারলেস গার্ল’ নামের আরেকটি মুর্তি বসায়। সেটিকে নারী ক্ষমতায়নের রূপক বলে প্রচারণাও চালায় কোম্পানিটি। কিন্তু প্রশংসার বদলে উল্টো সমালোচনার তীরই ছুটে আসে স্টেট স্ট্রিট এর দিকে। বহু নারী এই কোম্পানির এমন কর্মকান্ডকে হিপোক্রেসির নমুনা বলেও মনে করেন।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাস্টোডিয়ান ব্যাংকের হাতে বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে, এমনটা মনে করে স্বয়ং আমেরিকাই। আর তাই এমন অনেক ভুল, অনেক অপরাধকে মুখ বুজে সয়ে যেতে হচ্ছে অনেককেই। কারন এর জাল এতো গভীরে চলে গেছে যে, এর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়া মানে পৃথিবীর অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো। স্টেট স্ট্রিট এর ক্ষমতার হাত আজ এতোটাই বড় যে, একে দমিয়ে রাখার ক্ষমতা আর কারও নেই। বিলিয়নিয়ারদের টুটি চেপে ধরার মতো পরিক্রমশালী প্রতিষ্ঠান এই স্টেট স্ট্রিট। ২৩১ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে রাজ চালিয়ে আসা এই প্রতিষ্ঠানটি এতোকিছুর পরেও কেন ব্ল্যাকরক এবং ভ্যানগার্ডের মতো সমাল্লচিত নয়, তার সঠিক কোনও উত্তর নেই কোথাও। তবে অদুর ভবিষ্যতে মানুষ স্টেট স্ট্রিট এর সম্পর্কে জানবে, তাদের কর্মকান্ডের খোজ ব্ল্যাকরক আর ভ্যানগার্ডের মতোই রাখবে, এটাই কাম্য। তবে দিনশেষে এই কথাও সত্যি, স্টেট স্ট্রিট আজ ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান, যাদের জবাবদিহি করানোর মতো কোনও মাধ্যম আজ নেই।
আজকের জন্য এই পর্যন্তই। ব্লগটি আপনাদের কাছে কেমন লাগলো তা কমেন্টে জানাবেন । সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিদিন আপডেট পেতে চাইলে নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করে ফেলুন।