যে পরিবারের হাতের মুঠোয় গোটা পৃথিবীর অর্থনীতি ! Business Mania
৯/১১ এর টুইন টাওয়ার (Twin Tower) হামলা, সুয়েজ খাল (Suez Canal) দখল কিংবা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্টা। কেমন লাগবে? যদি আপনাকে বলা হয় যে এসব কিছুর পিছনেই রয়েছে শুধুমাত্র একটি পরিবারের হাত।
বিশ্বের শীর্ষ ধনীর যে তালিকাটা আপনার আমার সামনে প্রকাশ করা হয়, এর বাইরেও একটি পরিবার আছে যাদের সম্পত্তির পরিমাণ টপ ১০ শীর্ষ ধনীর মোট সম্পদের থেকেও বেশি। আর এই পরিবারটিই রথসচাইল্ড (Rothschild) পরিবার হিসেবে পরিচিত।
গোটা বিশ্ব তার অদৃশ্য হাতে নিয়ন্ত্রণ করা এই রথসচাইল্ড পরিবারটির সূচনা করেন মূলত মেয়ার আমসেল রথসচাইল্ড (Mayer Amschel Rothschild)। ১৭৪৪ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি জার্মানির (Germany) সনামধন্য ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহন করেন তিনি। আমসেলের যখন জন্ম হয় তখন জার্মানিসহ গোটা বিশ্বেই ইহুদিদের অন্য রকম একটা দাপট ছিল। এমনকি সমাজের বিভন্ন ক্ষেত্রে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী এর মানুষেরাও সে সময় নিপিড়ীত হতো।
পেশার আমসেল ছিলেন একজন ব্যাংকার (Banker)। সেই সাথে তিনি ছিলেন একজন মুদ্রা বা কয়েন কালেক্টর (Coin Collector)। এছাড়া ও বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক সামগ্রী কেনাবেচা করা ছিল রথসচাইল্ড পরিবারের একটি পারিবারিক ব্যবসা। বাবার হাত ধরেই আমসেল এই ব্যবসায় আসেন৷
সেই সময়কার রোমান সম্রাজ্যের বিখ্যাত জমিদার উইলিয়াম নাইন এর সাথে আমসেলের একটা বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি আমসেলকে কোর্ট জিও এর পদবী দেন।
কেননা সেই সময়কার সমাজে খ্রিস্টানদের এই অধিকারটা ছিল না যে তারা কোন ব্যাংক থেকে ঋন নিতে পারবে। এই কাজটা করতে তাদের ইহুদিদের সাহায্য নিতে হতো। একজন ইহুদি তাদের হয়ে এই ব্যাংকের কাজটা করে দিতো। আর যেই ইহুদি এই কাজটা করতো তাকে বলা হতো কোর্ট জিও।
ব্যাংকে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাধে আমসেল ব্যাংকের অনেক খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। আর সেই জ্ঞ্যান কে কাজে লাগিয়ে আমসেল রথসচাইল্ড এন্ড কো. (Rothschild & Co.) নামে একটি বেসরকারি ব্যাংক খুলে ফেলে।
এর পরবর্তী সময়গুলোতে রথসচাইল্ড তার ৫ ছেলের মধ্যে ৪ ছেলেকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি শহরে পাঠায়। সেখানে গিয়ে তাদের ব্যাংকের ব্রাঞ্চ (Branch) প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এই চারটি শহর হলো ভেনিয়া, প্যারিস, নেপ্টুস আর লন্ডন।
আর এভাবেই রথসচাইল্ড পরিবার বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক প্রাইভেট ব্যাংকিং সিস্টেম এর সূচনা করে।
বলা হয়ে থাকে নেপোলিয়নীয় কযুদ্ধ থেকে সবথেকে বেশি লাভবান হয়েছে এই রথসচাইল্ড পরিবারে। কীভাবে? চলুন সেটা বিস্তারিতভাবে জানা যাক।
১৮১৩ থেকে ১৮১৫ এই সালে গ্রেট ব্রিটেন আর ফ্রান্সের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ চলতে থাকে। ধারাবাহিকভাবে চলা এই যুদ্ধগুলোকে বলা হয় নেপোলিয়নীয় যুদ্ধ।
প্রিয় পাঠক আমরা একটু আগেই বলেছি যে রথসচাইল্ড পরিবারের। বিশ্বের ৫টি বড় বড় শহরে তাদের ব্যাংকের ব্রাঞ্চ খোলে । সে সময়টাতে লন্ডন (London) আর প্যারিসের (Paris) মধ্যেও তাদের ব্রাঞ্চ ছিল।
এখন যুদ্ধ পরিচালনার জন্য তো দরকার অর্থ। একটা দেশ যতই ধনী হোক না কেন দু বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কোন দেশের পক্ষেই সম্ভব ছিল না। আর এই সুযোগটিকেই কাজে লাগায় রথসচাইল্ড পরিবার।
তাদের লন্ডনের ব্রাঞ্চ থেকে যোগাযোগ করে ব্রিটিশ রাজ পরিবারের সাথে আর প্যারিস থেকে নেপোলিয়ন এর সাথে। এরপর তারা দু পক্ষকেই জানায় যে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যতটুকু অর্থ দরকার সেটা রথসচাইল্ড পরিবার কড়া সুদে ঋণ হিসেবে দেবে । আর যুদ্ধে কোন পক্ষই হার মানতে চায় না। তাই লন্ডন ও প্যারিস একই রথসচাইল্ড পরিবার থেকে যুদ্ধ চালানোর জন্য কড়া সুদে ঋণ নেয়।
আর এভাবেই রথসচাইল্ড পরিবার নিজেদের স্বার্থের জন্য ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মধ্যে হতে থাকা যুদ্ধকে আরো দীর্ঘায়িত করে।
সেই অষ্টাদশ শতাব্দীতেই রথসচাইল্ড পরিবার ছিল সময়ের থেকে বেশ এগিয়ে। কেননা সেই সময়টাতেই তাদের নিজস্ব কুরিয়ার সিস্টেম (Courier System) ও গোয়েন্দা বাহিনি ছিল।
নেপোলিয়নীয় যুদ্ধের শুরুতেই রথসচাইল্ড পরিবার বেশ বিশাল পরিমানে লন্ডনের ব্যাংক থেকে বন্ড কিনে রাখে। কেননা আগে ভাগেই তার বুঝতে পেরেছিল যুদ্ধে জয় হবে ব্রিটেনের। যুদ্ধে জয়লাভ করে ব্রিটেন আর এই সংবাদটা সে সময়কার রথসচাইল্ড পরিবারের প্রধান নাথান রথসচাইল্ডই রাজাকে সবার আগে জানায়।
প্রিয় দর্শক এখন আপনারা সবাই জানেন যে যুদ্ধ শেষে একটা দেশের অর্থনীতিকে পুনরায় চাঙ্গা করতে সে দেশের প্রধান বা সরকার নানা রকম পলিসি (Policy) গ্রহন করে। যাতে করে বন্ড শেয়ার এসবের প্রাইজ বাড়তে থেকে। ব্রিটেনের সাথেও তাই হয়। যুদ্ধ শেষের দুবছরের মাথায় অর্থাৎ ১৮১৭ সালে ব্রিটিশ বন্ডের প্রাইজ হুড় হুড় করে বাড়তে থাকে। আর এই সুযোগে নিজেদের কেনা সকল বন্ড রথসচাইল্ড পরিবার বিক্রি করে বেশ বড় অংকের প্রফিট (Profit) লাভ করে।
একটা হিসেবে অনুযায়ী সে সময় একজন সাধারণ ব্রিটিশ নাগরিকের বাৎসরিক আয় যেখানে ছিল মাত্র ৫০ পাউন্ড সেখানে রথসচাইল্ড পরিবারের মোট সম্পদের মূল্যই ছিল প্রায় ৫ লক্ষ পাউন্ড।
এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সেই সময়ই রথসচাইল্ড পরিবার ঠিক কতটা ধনী ছিল।
ধারণা করা হয় শুধুমাত্র কাগজে কলমে রথসচাইল্ড পরিবারের মোট সম্পদের পরিমান প্রায় ২ থেকে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার।
এছাড়া প্রায় প্রতি বছর রথসচাইল্ড পরিবার প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ডলারের প্রফিট করে থাকে।
প্রিয় পাঠক এবার আপনাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে। তাহলে এই যে আমরা বিল গেটস (Bill Gates), ইলন মাক্স (Elon Musk), আদানী (Adani) এদের নাম শুনি তাহলে কি আমরা ভুল শুনি?
রথসচাইল্ড আসলে এমন একটি পরিবার যাদের প্রায় প্রতিটি প্রফিট্যাবল মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি (Profitable Multinational Company) শেয়ার রয়েছে। এখন সেটা ফেইসবুক হোক কিংবা মাইক্রোসফট বা ইলন মাক্স এর টেসলা।
শুধু তাই নয় আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিট আর ব্রিটিশ ফেডারেল ব্যাংকের পরিচালনা সদস্যদের মধ্যেও রয়েছে এই রথসচাইল্ড পরিবারের সদস্যরা।
রথসচাইল্ড পরিবারকে ঘিরে রয়েছে নানা রকম কন্সপিরেসি থিওরি (Conspiracy Theory)। যার কিছু কিছু সত্য হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
৯/১১ এর আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা আর সেটাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে আমেরিকার পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে আক্রমণ করার ব্যাপারে আমরা সকলেই প্রায় জানি। আপনাদের মধ্যে অনেকেই আবার এটাও শুনেও থাকবেন যে টুইন টাওয়ারে হামলার পিছনে খোদ আমেরিকারই হাত ছিল। আর আমেরিকা এই কাজটি করে রথসচাইল্ড পরিবারের কথাতে।
সে সময়টাতে আমেরিকার ওয়াল স্ট্রিট (Wall Street) থেকে বিশাল পরিমানে অর্থ সড়ানো হয় আমেরিকার সরকারের কথাতে। যেটার ব্যাপারে একটু একটু সংবাদ মিডিয়াগুলোতে আসা শুরু করেছিল। আমেরিকান সরকারের কাছে এটা ধামাচাপা দেওয়া ছাড়া আর উপায় ছিল না। এছাড়া ওসামা বিন লাদেনকে ততদিনেও থামাতে পারে নি যুক্তরাষ্ট্র ফলে সে সময়কার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে এটা ছিল চেয়ার বাচানোর লড়াই।
আর তাই বলা হয়ে থাকে রথসচাইল্ড পরিবারের নির্দেশে আমেরিকার টুইন টাওয়ারে হামলা করে বসে। এতে লাভ হয় দুটি, অর্থ সড়ানোর সংবাদ ও ধামা চাপা পরে যায় আর ওসামা বিন লাদেনকে (Osama bin Laden) শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করে একইসাথে নির্বাচনে জয়ের পথটাও মসৃণ হয়ে যায়। এ যেন একই ঢিলে দুই পাখি মারে আমেরিকা রথসচাইল্ড পরিবারের সহায়তায়।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়!! আপনারা হয়তো মিশরের সুয়েজ খালের কথা শুনে থাকবেন। ১৮৭৫ সালের দিকে মিশরের ততকালীন রাজা নিজেকে দেউলিয়া ঘোষনা করে এই সুয়েজ খালের শেয়ার বিক্রি এর সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি ব্রিটেনের প্রেসিডেন্ট এর কাছে সে সময় প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলারে এই সুয়েজ খালের প্রায় ৪৪% বিক্রি করে দেয়। আর ব্রিটেন এই টাকা টায় কিন্তু রথসচাইল্ড পরিবার থেকেই। আর ১৯১৪ সালেই এই শেয়ারের দাম ১০ গুন বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড।
শুধু তাই নয় এই যে বর্তমান ইসরাইলের অসহায় ফিলিস্তিনের (Palestine) প্রতি এত অত্যাচার এত নির্মমতা এরো সূত্রপাত ঘটে কিন্তু রথসচাইল্ড পরিবারের হাত ধরেই বলে অনেকে মনে করে।
সাল ১৯১৩ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ মাত্র শেষ হয়েছে। ব্রিটেন পরাজয় স্বীকার করে। আর এসময় তারা ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্টার ঘোষণা দেয়। আর এই মর্মে তিনি প্রথমেই ছিলি সেই সময়কার রথসচাইল্ড এর প্রধান ওয়ালান্ডার রথসচাইল্ডকে। ইহুদিদের জন্য যে একটি আলাদা রাষ্ট্র দরকার এই মর্মে চলে আসা মুভমেন্ট এর ঘোষণাদাতাদের মধ্যেও ছিল এই রথসচাইল্ড পরিবারের সদস্যরা।
প্রিয় দর্শক আপনারা অনেকেই নিশ্চয় জেরুজালেম (Jerusalem) সম্পর্কে জানেন। আর সেখানে অবস্থিত আল আকসা মসজিদ (Al-Aqsa Mosque) সম্পর্কে, যেটা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র একটা মসজিদ। দীর্ঘদিন যেটা ছিল ফিলিস্তিনের রাজধানী।
কিন্তু বর্তমানে গুগোল করলে আপনি দেখবেন জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে দেখাচ্ছে৷ আর ইহুদিরা আল আকসায় নিজেদের প্রার্থনা করে যাচ্ছে।
এছাড়াও বলা হয়ে থাকে যে, স্যাটানিজম চর্চা মানে শয়তানের পূজা, কালোজাদু এমনকি ইল্যুমিনাতি নামের যে গুপ্ত সংগঠন রয়েছে সেসবের বড় বড় হর্তাকর্তাদের তালিকাতেও রয়েছে এই রথসচাইল্ড পরিবারের সদস্যদের নাম। এমনকি সমকামী ও ট্রান্সজেন্ডারকে প্রোমট করে আসা জর্জ সোরোস এর ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের পিছনেও হাত রয়েছে এই রথসচাইল্ড পরিবারের সদস্যরা।
রথসচাইল্ড পরিবার ইতোমধ্যেই গোটা বিশ্বকেই নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে ফেলেছে, নিয়ন্ত্রণ করছে। কি তাদের লক্ষ্যটা হয়তো প্রকাশ পাবে অদূর কোনো ভবিষ্যতে আর তার অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই সবার।
প্রিয় পাঠক আজ এ অব্দি। কেমন লাগলো আমাদের আজকের ব্লগটি? কমেন্টে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। সেই পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ভালো লাগলে লাইক দিন নিউজলেটার, সাবস্ক্রাইব করুন এবং শেয়ার করুন সবার সাথে।