Goldman Sachs – কিভাবে ওয়াল স্ট্রিট নিয়ন্ত্রন করে? How Goldman Sachs Control The Wall Street
বর্তমানে শেয়ার মার্কেট ট্রেডিং এই শব্দগুলোর সাথে কিন্তু আমরা সবাই কম বেশি জনপ্রিয়। বিশেষ করে হাল আমলে মুক্তি পাওয়া “স্ক্যাম ১৯৯২ (Scam 1992) ” এর মতো মুভি বা সিরিজগুলোও কিন্তু শেয়ার মার্কেট আর ট্রেন্ডিং এর এই নতুন জেনারেশন এর আগ্রহ বেশ বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকেই হয়তো আবার এই মুভিতে ইন্সপায়ারড হয়ে অলরেডি শেয়ার মার্কেট আর ট্রেডিং এ নেমে পরেছে। এছাড়াও কিছু বছরের মধ্যে পরিচিতি পাওয়া ক্রিপ্টো কারেন্সিও (Crypto Currency) কিন্তু ট্রেডিংকে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় করে তুলেছে।
এটা তো গেলো শেয়ার মার্কেটের কথা । কিন্তু আপনাকে যদি বলা এই শেয়ার মার্কেটেই এমন কিছু দানবীয় কোম্পানি রয়েছে যাদের সামর্থ্য আছে যেকোন দেশের শেয়ার বিজনেসকে পুরো নাড়িয়ে দেওয়ার।
শুধু তাই না, আপনি যেই দেশেরই হন না কেন! এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের প্রভাব কিন্তু আপনার উপর অবশ্যই আছে। আপনি কিন্তু চাইলেও এদের ছোবলের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারবেন না। শুধু কি তাই, আমরা সবাই জানি যে শেয়ার বিজনেস এ ধ্বস খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। বিশেষ করে আমাদের মতো দেশের জন্য । এখন শেয়ার মার্কেট ধ্বসের পর কোন কম্পানিগুলো সার্ভাইভ করবে আর কোন কম্পানিগুলো টিকতে পারবে না তাও কিন্তু নির্ধারিত করে এই বড় বড় কম্পানিগুলো। আর এমনই একটা কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান হলো গোল্ডম্যান স্যাকস।
বর্তমান পৃথিবীতে শেয়ার বাজারে রাজত্ব করা গোল্ডম্যান স্যাকসের গঠিত হয়েছিল আজ থেকে এক শতাব্দির ও বেশি সময় আগে। ক্যালেন্ডারে তখন চলছিল ১৮৮৬ সাল…. আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে মার্কাস গোল্ডম্যান নাম এ এক ইহুদী বাস করতো। খুবই সাধারণ এবং ছোট্ট একটি কাপড়ের ব্যাবসা ছিল তার। কিন্তু ছোট থেকেই মার্কাস ছিল একদম ব্যাবসায়িক মন মানসিকতার। তো ওই সময়টাতে মার্কাস এর কাপড়ের ব্যবসা বেশ ভালো যাচ্ছিল। বেশ ভালো প্রফিট (Profit) সে পেতে থাকে ওখান থেকে।
১৮৮০ এর দশকে ব্যাংকিং এবং ফিন্যান্স (Banking & Finance) এর জগতে একটা ঝামেলা দেখা যেত । সমস্যাটা বেশি দেখা দিত ছোট ছোট কোম্পানি আর এক মালিকানা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। এদের কাছে ব্যাংক সহজে তাদের লোন দিতে চাইতো না বা একদমই দিতো না। ফলে তাদের এই ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকের চক্কর কাটতে থাকতে হতো।মার্কাস নিজেও এমন সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার পর নিজেই সমাধান বের করার উপায় খুজতে থাকে এবং সিদ্ধান্ত নেয় যে একমাত্র ফিন্যান্স মার্কেটে পা দেয়াই তার জন্য সুবিধা হবে ।
তিনি গোল্ডম্যান নামে ১৮৮২ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে (New York City) একটি মাত্র ঘর ভাড়া নিয়ে যেখানে সাধারনত কয়লার চুলা রাখা হত এমন একটি মাত্র ঘর ভাড়া নিয়ে একটা প্রতিষ্ঠান খুলে বসে। সেখানে তার সঙ্গি হয় তার ই জামাই স্যামুয়েল স্যাকস ।এর ৩ বছর পর গোল্ডম্যানের ছেলে হেনরি গোল্ডম্যান এবং তার জামাতা লুডভিগ ড্রেফাস ব্যবসায় যোগ দেন এবং ফার্মটি তার বর্তমান নাম গোল্ডম্যান স্যাকস অ্যান্ড কোং (Goldman Sachs & Co.) গ্রহণ করে।
সহজ ভাষায় গোল্ডম্যান স্যাকস এর কাজগুলো ছিল তারা সেই সব ছোট ছোট কোম্পানি বা এক মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো যারা লোন পেত না তাদের কাছে ব্যাংক লোন একটু বেশি মূল্যে নিয়ে পাইয়ে দেওয়া। যেহেতু ওই ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোন একদমই কোন ঋণ পেত না তাই তাদের কাছে গোল্ডম্যানের এই অফারটা ছিল সাপে বর পাওয়ার মতো। মার্কাস এই পদ্ধতিতে যে ডকুমেন্টগুলো ব্যবহার করতো তিনি সেগুলোর নাম দেয় কমার্শিয়াল পেপার। মার্কাস এই ব্যাংক লোন বিক্রি করার আইডিয়াটা এতই বেশি জনপ্রিয় ছিল যে প্রতিষ্ঠান শুরুর মাত্র ৫ বছরের মাথায় তারা প্রায় ৩০ মিলিয়িন মার্কিন ডলারের কমার্শিয়াল পেপার বিক্রি করে ফেলে। এবং আমলে ৩০ মিলিয়ন ডলার যে আসলে কত বড় এমাউন্টের টাকা সেটা কিন্তু সহজেই অনুমান করা যায়।
গোল্ডম্যানের এই কমার্শিয়াল পেপারের আইডিয়াটা থেকে কিন্তু বর্তমানে অনেক দেশের সরকারও তাদের দেশের বিভিন্ন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানের কাছে এই কমার্শিয়াল পেপার গুলো সেল করে থাকে।
এর কিছু বছর এর মধ্যে গোল্ডম্যান স্যাকস এটি লক্ষ্য করে যে ফিন্যান্স মার্কেটে থাকা সাধারন ব্যাংকগুলো ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলো তে অর্থ লগ্নি করে তাদের ব্যাবস্থাপনা করা টা কষ্ট সাধ্য হয়ে পরছিল , কেননা সে সময়টাতে আমেরিকার অর্থনীতিতে একটা গ্রোথ (Growth) চলছিল। ছোট ছোট অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান জন্ম নিচ্ছিল। আর তারা তাদের ব্যবসা ও দ্রুত অগ্রসর হচ্ছিল। এই কারনে সেই সময়টাতে তাদের আরো বেশি পরিমানে ইনভেস্টমেন্ট এর দরকার ছিল।
সেই সময় গোল্ডম্যান চিন্তা করে যে তারা এইসব প্রতিষ্ঠানকে ইনভেস্টমেন্ট করা শুরু করলে কেমন হয় ব্যাপারটা? যেই ভাবা সেই কাজ। গোল্ডম্যান সেই সব কোম্পানিগুলো ইনভেস্ট শুরু করা থেকেই তারা ধীরে ধীরে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকে রূপ নেয়। বর্তমানে আমাদের আশে পাশে যে আমরা অনেকগুলো ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক দেখি এটির আইডিয়াও কিন্তু এসেছে এই গোল্ডম্যানের হাত ধরেই।
ধীরে ধীরে এভাবেই গোল্ডম্যান নিজেদের গ্রো করতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের ক্যাপিটাল এসে দাঁড়ায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে।
এরপর ১৮৯৭ সালে যখন ইনভেস্টমেন্ট আর কমার্শিয়াল পেপারের দিক থেকে গোল্ডম্যান একটা বেশ পরিচিত নাম হয়ে পরেছিল। কিন্তু গোল্ডম্যান চাচ্ছিল নিজেদের বিজনেসকে (Business) আরো বেশি বড় করতে। তাই তারা ডিসিশন নেয় IPO (Initial Public Offering) বা ইনিশিয়াল পাব্লিক অফারিং ব্যাবস্থা চালুর দিকে।
যখন কোন প্রতিষ্ঠান নিজেদের পাবলিক করে শেয়ার মার্কেটে যেতে চায়। তখন তাদের আইপিও(IPO) লঞ্চ করতে হয়। আর তারা এই কাজটা একা করতে পারে না। এই কাজে তাদের সাহায্য নিতে হয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকগুলোর। এই সময়ে এসে গোল্ডম্যান ও ঠিক করে তারা এখন থেকে কোম্পানিগুলোর আইপিও লঞ্চের কাজ টাও করে দিবে। যেহেতু আগেই বলেছি গোল্ডম্যান একটা ইহুদি কোম্পানি তাই আইপিও লঞ্চের জন্য ও তারা বেছে নেয় অন্য একটা ইহুদী কোম্পানি ওআইসিকে(OIC)। গোল্ডম্যানের মাধ্যমে আইপিও লঞ্চের পরই ওআইসির এর শেয়ারের দাম দ্রুত বাড়তে থাকে। আর অল্প সময়ের মধ্যে গোল্ডম্যানের টোটাল ক্যাপিটাল ও এসে পৌছায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারে। যা ওই সময়ের জন্য ছিল বিশাল একটি ব্যাপার।
এরপর আসে বিংশ শতাব্দি। এসময় এসে গোল্ডম্যান সিদ্ধান্ত নেয় তারা নিজেরাও নিজেদের আইপিও লঞ্চ করবে। কিন্তু ১৯২৯ সালে আমেরিকার গোটা শেয়ার মার্কেট বড় একটা ধাক্কা খায়। অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এই ধাক্কাটা এসে লাগে গোল্ডম্যানেও।
কিন্তু গোল্ডম্যান বেচে যায় তাদের আরেক পার্টনার সিডনি ওয়েনবার্গের কারণে। সিডনি ওয়েনবার্গের ইনভেস্টমেন্ট মার্কেটে ছিল বিরাট এক জানাশোনা। যেকারনে অনেক ব্যাংক এই সময়টাতে এসেও গোল্ডম্যানের সাথে ডিল করে।
এরপর থেকে গোল্ডম্যানকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।
তবে বর্তমান সময়ে এসে গোল্ডম্যান এর নামে চলছে নানা রকম অভিযোগ। তার মধ্যে সবথেকে বড় অভিযোগ টি হলো ইসরাইলকে সাহায্য করার। গোল্ডম্যান একটা ইহুদী প্রতিষ্ঠান হবার কারণে এর ডায়রেক্ট লিংক আপ পাওয়া গেছে ইসরাইলের সাথে।
ইসরায়েল সরকারের অনেক প্রজেক্টেই সরাসরি টাকা ঢেলে থাকে গোল্ডম্যান । শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ইসরাইলে প্রতিষ্ঠানেও অল্প সুদে ঋণ দেওয়া থেকে শুরু করে শেয়ার মার্কেট ম্যানুপুলেট (Manipulate) করে থাকে যেন কোম্পানির শেয়ারের দাম যাতে বাড়ে সেই ব্যবস্থা করে থাকে এই ইহুদি প্রতিষ্ঠানটি।
প্রিয় পাঠক আজ এই অব্দি৷ আগামী ব্লগে আমরা আসবো এমনই নতুন কোন বিষয় নিয়ে। সেই অব্দি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। সত্য আর ন্যায়ের পথে থাকুন। সেই সাথে থাকলো পরবর্তী ব্লগ পড়ার আমন্ত্রণ। চাইলে আমাদের অন্য ব্লগগুলো দেখে আসতে পারেন। আর এ ধরণের ব্লগ পছন্দ করলে, আমাদের নিউজলেটারে Subscribe করতে ভুলবেন না।