টিনএজ কোডার থেকে তরুণ মিলিনিওর – নিক ডি’অ্যালোসিও এর অনুপ্রেরণামূলক গল্প। Story of Nick D’Aloisio
একটু কল্পনা করে দেখুন তো, যদি কেউ আপনাকে বলে সে তার মাত্র ১২ বছর বয়সেই তার ছোট্ট রুমটিকে এক বিশাল মিলিয়ন ডলার প্রযুক্তি কেন্দ্রে পরিণত করেছে, আপনি কি তাকে বিশ্বাস করবেন? অবশ্যই না!
আসলে বিশ্বাস না করার ই কথা কারন এটি বলতে গেলে একটি অসম্ভব বিষয়।
কিন্তু আমরা যদি বলি, এই অসম্ভবকে ও একজন সম্ভব করেছে ।
কিন্তু কে সে? সে হচ্ছে None other Then নিক ডি’অ্যালোসিও! (Nick D’Aloisio)
এই তরুণ প্রডিজি মাত্র ১৮ বছর বয়সে কোডিং whiz থেকে টেক মিলিওনেয়ার হয়েছেন। আর অবশ্যই তার এই জার্নিতে ছিল অনেক প্রতিবন্ধকতা, কিন্তু সেসব প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আজ হয়েছেন young miliniore নিক ডি’অ্যালোসিও।
আর তিনি এটাও প্রমান করেছেন যে, যদি তুমি কোনো স্বপ্ন দেখো এবং তার প্রতি তুমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকো, তাহলে বয়স কোনো বিষয় নয়।
তো,চলুন জেনে নেই, নিক ডি’অ্যালোসিও এর teen coder থেকে tech titan হওয়ার inspiring এবং অবিস্মরণীয় গল্প।
এই নিক ডি’অ্যালোসিও কিন্তু এতো সহজেই টেক টাইটান হন নি, এর পেছনে ছিল অনেক সংগ্রাম এবং পরিশ্রম। আর আপনি জানলে অবাক হবেন যে নিক মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের এই অসাধ্য জার্নি শুরু করেছেন।
১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসের ১ তারিখে যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন নিক। জন্মের পর পর ই ডি’অ্যালোসিও পরিবার অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান । মাত্র ৭ বছর বয়সে নিক তার উকিল মা এবং ব্যাংকার বাবার সাথে আবার যুক্তরাজ্যে ফেরত আসেন। এখানেই কিংস কলেজ স্কুল, উইম্বল্ডন থেকে এ লেভেল পরীক্ষা দেয়। ছোটবেলা থেকেই নিক কখনই তার সমবয়সী ছেলে -মেয়েদের মতো ছিলেন না। এই অল্প বয়সে, তিনি প্রযুক্তি ও প্রযুক্তির জগত নিয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
মাত্র ১২ বছর বয়সে, যুক্তরাজ্যের এই কৌতূহলী শিশুটি কিছু একটা করার তৃষ্ণা থেকে উদ্দীপিত হয়ে কোডিং এর জগতে পা রাখেন। আর কোনো প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছাড়াই, শুধুমাত্র ইউটিউব ও অনলাইন টিউটোরিয়াল এর সাহায্যে তিনি নিজেই প্রযুক্তির ভাষা শিখেছিলেন। কিশোর বয়সেই নিকের চোখে পড়েছিল একটি সমস্যা আর তা হচ্ছে Data Overload।
বিভিন্ন আর্টিকে্লের বিশাল বিশাল টেক্সট হজম করা এবং সেগুলোর পেছনে সময় নষ্ট করতে নিক ক্লান্ত হয়ে, তিনি নিজেই একটি অ্যাপ তৈরির পরিকল্পনা করলেন যা আর্টিকেল গুলো কে ছোট ছোট অংশে সংক্ষিপ্ত করতে পারবে।
বলা আছে না, বিন্দু বিন্দু জলে সাগর তৈরী হয়, ঠিক তেমনি নিকের এই ছোট প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে তিনি তার চূড়ান্ত লক্ষ্যের দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
আর সেই সুবাদে নিক এর দীর্ঘ প্রচেষ্টা এবং কৌতুহলী মন জন্ম দিয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত অ্যাপ Summly(সামলি) এর.
নিক বলেছেন: “আমি সবসময়ই আগ্রহী ছিলাম কিভাবে জিনিস গুলো কাজ করে তা জানা, বিশেষ করে ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলো। আমার মনে আছে অনলাইনে তথ্য খুঁজতে গেলে অনেক হতাশ লাগত, কারণ কিছু সার্চ করতে গেলে প্রচুর টেক্সটের মধ্য দিয়ে যেতে হতো। আর এই ধারনা থেকেই Summly এর জন্ম।”
নিক একটি বাস্তব সমস্যা চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। সে সময়, সংবাদ এবং আর্টিকেল গুলো দীর্ঘ হওয়াতে প্রয়োজনীয় তথ্য খুজে বের করা টা ছিল সময় সাপেক্ষ।
আর নিকের এই অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই এই দীর্ঘ আর্টিকেল গুলো ছোট ছোটো সারাংশে সংকুচিত হতো। যার ফলে সময় অনেকটা বেঁচে যেত। আর এভাবেই Summly হয়ে উঠেছিল – স্মার্টফোনের প্রথম দিকের একটি বিপ্লবী ধারণা।
সময়টা তখন ছিল ২০০৭, যখন মোবাইল অ্যাপ গুলো তখনো তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। নিক তার প্রচেষ্টা , স্ব-শিক্ষা এবং দক্ষতা দ্বারা এমন কিছু তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন যা আসলেও সত্যিকারের যুগান্তকারী উদ্ভাবন হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। তার তৈরী করা অ্যাপ প্রযুক্তি জগতের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে খুব বেশি সময় নেয় নি।
তারপর এমন কিছু হলো যা নিক কখনো কল্পনাও করতে পারে নি,
মাত্র 17 বছর বয়সে নিক একটি জীবন বদলানো প্রস্তাব পেলো।
ইয়াহু (Yahoo), যারা কিনা টেক জগতের বিশাল এক জায়ান্ট, তারা summly তে বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পেলো যা সেই সময় ২০০,০০০ (দুই লাখ) এর ও বেশিবার ডাউনলোড হয় এবং এটি তারা আয়ত্ত করার জন্য নিক কে $30 মিলিয়ন ডলারের এর প্রস্তাব দিলো। আর, এটি ছিল নিক এর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট।
রাতারাতি, নিক একজন মিলিয়নিয়ার হয়ে গেল, তার গল্প বিশ্বব্যাপী শিরোনামে এলো এবং অগণিত তরুণ মনকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করলো।
কিন্তু Summly নিক এর প্রথম উদ্ভাবন ছিল না, মূলত ২০১১ প্রথমে তিনি trimit (ট্র্রিমিট) নামের একটি ios এপ্লিকেশন লঞ্চ করেছিলেন যা কিনা বড় ইমেইল ও ব্লগ পোস্ট কে ১০০০,৫০০ বা ১৪০ শব্দে রূপান্তরিত করতে পারত। এটি, apple playstore এ ১০০,০০০ (এক লাখ ) এর ও বেশি ডাউনলোড হয়। পরিবর্তিতে চাইনিজ Tycoon Li ka-shing (লি কা শিং) এর নজরে অ্যাপটি নজরে আসে এবং তিনি এতে তিন লাখ ডলার ($300,000) ইনভেস্ট করেন, এর পর নিক trimit(ট্র্রিমিট) এপ্লিকেশন কে redesign করে এবং এর নতুন নাম দেয় summly .
নিক বলেন: “সত্যি বলতে এটি আমার কাছে একদম অবাস্তবের মতো লাগছিলো । আমি কখনই ভাবিনি যে আমার বেডরুমে তৈরি করা কোনো কিছু আমাকে এতটা এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। কিন্তু এটা আমাকে দেখিয়েছে যে আপনি যদি কোনো কিছুর প্রতি ডেডিকেটেড হন এবং আপনি কঠোর পরিশ্রম করেন তবে সবকিছুই সম্ভব।”
কিন্তু নিকের গল্প সেখানেই শেষ হয় নি। তিনি কেবল টাকা উপার্জনে মনোযোগ দেন নি। পরবর্তিতে তিনি ইয়াহুতে যোগ দেন এবং সামলির প্রযুক্তিকে তাদের প্ল্যাটফর্মে একীভূত করার জন্য কাজ করেন। তবে নিকের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার চেতনা সব সময় প্রজ্বলিত ছিল, যার কারনে কয়েক বছর পর নিক “স্ফিয়ার” নামে একট অ্যাপ বানান, স্ফিয়ার একটি রিয়েল-টাইম মাইক্রোপেমেন্ট রিলেটেড question-and-answer অ্যাপ ছিল। যেটি পরবর্তিতে নিক একটি গ্রুপ চ্যাট অ্যাপে পরিণত করে।
আবারও, নিকের এই উদ্ভাবনী চিন্তা আরেক টেক জায়ান্টের নজর কেড়ে নেয়। ২০২১ সালে, জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া সাইট টুইটার (Twitter)যার বর্তমান নাম “এক্স”, “স্ফিয়ার” এর অংশীদারিত্ব কিনে নেয়।
এছাড়াও ২০১৪ তে লাস ভেগাস এ কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স শোতে তিনি yahoo news digest লঞ্চ করেন । ইয়াহু নিউজ ডাইজেস্ট মোবাইল ব্যবহারকারীদের দিনে দুবার ডাইজেস্ট আকারে দিনের গুরুত্বপূর্ণ খবরের সারাংশ সরবরাহ করে থাকে। তার এই উদ্ভাবন ২০১৪ অ্যাপল ডিজাইন অ্যাওয়ার্ডের বিজয়ী ছিল। নিক এর পর অক্টোবর ২০১৫ ইয়াহু থেকে পদত্যাগ করেন।
এত কিছুর পাশাপাশি তিনি কিন্তু নিজের পড়ালেখাও শেষ করেছেন একজন মেধাবী ছাত্রের মতো।
তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিলোসফি ও কম্পিউটার সাইন্স এ স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এর পর ২০১৯ এ তিনি অক্সফোর্ড থেকে ফিলোসফিতে বি.ফিল করেছেন এবং ২০২১ থেকে একই বিষয়ে পিএইচডি শুরু করেছেন।
নিক একজন তরুণ উদ্যোক্তা হওয়ায় মিডিয়াতেও সমান দৃষ্টি আকর্ষন করেছে।
এছাড়াও নিক ২০১৩ সালে সামলি ও ইয়াহু তে তার অবদানের জন্য ‘দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের’ “ইনোভেটর অফ দি ইয়ার” খেতাবে ভূষিত হন । তিনি বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ঘোষিত বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী তরুণ দের একজন ছিলেন।
তাহলে, বুঝতেই পারছেন যে নিক কতটা প্রতিভাবান এবং কতটা প্যাশনেট।
নিক সব সময় এক অনন্য স্পৃহা অনুভব করেন যা তাকে নতুন কিছু জানার, নতুন কিছু উদ্ভাবনের উৎসাহ দেয়!
তার থেকে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে,কেননা আমাদের সবার মাঝেই রয়েছে এমনি হাজারো নিক ডি’অ্যালোসিওর।
তাহলে, নিক ডি’অ্যালোসিওর অসাধারণ যাত্রা থেকে আমরা কি কি শিখতে পারি?
প্রথমত, বয়স হচ্ছে একটি সংখ্যা মাত্র, নিক অল্প বয়সে অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন করেছে এবং এটা এই প্রমাণ করে যে আপনার বয়স যতই হোক, যদি আপনার মাঝে লক্ষ্য এবং উৎসাহ থেকে থাকে তাহলে যে কোনো কিছুই সম্ভব। নিক যদি তার শোবার ঘর কে মিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি কেন্দ্রে পরিণত করতে পারেন, তাহলে আপনি কী করতে পারেন তা কল্পনা করুন!
দ্বিতীয়ত, ইচ্ছা শক্তি হচ্ছে উদ্ভাবনের চাবি কাঠি। নিকের সাফল্য এসেছে তার নিজস্ব ইচ্ছাশক্তির জোরে এবং সমস্যা সমাধান করার মানসিকতা থেকে। নিক সমস্যা সমাধান এবং অর্থপূর্ণ কিছু তৈরি করার জন্য তার ভেতরের প্রকৃত প্যাশন দ্বারা চালিত হয়েছিল।
এবং, তৃতীয়ত ও সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো কঠোর ।
কঠোর পরিশ্রম হল সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। নিক বিভিন্ন ইউটিউব ও অনলাইন টিউটোরিয়াল দেখে বিভিন্ন বিষয় শেখার চেষ্টা করেছে এবং নিজের আইডিয়া গুলোকে বাস্তবে রূপান্তরিত করাবার জন্য অসংখ্য শ্রম ঘন্টা ঢেলে দিয়েছে।
নিক ডি’অ্যালোইসিওর গল্প আমাদের সকলের, তরুণ এবং বৃদ্ধ সবার জন্য একটি অনুপ্রেরণা। এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে কোনো স্বপ্ন খুব বড় নয়, কোনো লক্ষ্য অসম্ভব নয়, যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে লক্ষ্য, দক্ষতা এবং কঠোর পরিশ্রম করার ইচ্ছা থাকে।
তাহলে, এখনো কিসের অপেক্ষা করছেন? আজ থেকেই লেগে পড়ুন নিজের গল্প তৈরিতে।
আমাদের অনুপ্রেরনা আসে কিন্তু আপনাদের কমেন্ট থেকে,কমেন্টে অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না। তাই ব্লগটি ভাল লাগলে লাইক দিন নিউজলেটার ও শেয়ার করুন সবার সাথে।