TikTok ও ByteDance এর অবিশ্বাস্য গল্প: আমেরিকা-চীনের লড়াই এবং ভবিষ্যৎ
চীনের (China) উত্তাল জনতায় ছেয়ে গেছে সড়ক । স্লোগান, হর্ন ও গানে গানে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে অজস্র মানুষ। সাথে যোগ দিয়েছে অনেক বিখ্যাত শিল্পীরাও। তাদের সবার এতদিনের প্রিয় App বন্ধ হতে দেবে না তারা। কিন্তু চীনের সরকার তা নিষিদ্ধ করতে বদ্ধ পরিকর। ওদিকে আমেরিকার সেটি কিনে নেওয়া কিংবা বন্ধ করার সরাসরি হুমকি ও ক্ষুব্ধ চীন সরকারের চোখের সামনে দিয়ে ভারতে (India) এক রাতেই ২০০ মিলিয়ন ব্যবহারী হারিয়ে ফেলে যে অ্যাপটি, তার নাম – TikTok, যার মূল প্রতিষ্ঠানের নাম ByteDance ।
১৫৫টি দেশ ও ৭৫টি ভাষার ৮০ কোটি মানুষের প্রাত্যহিক জীবন ঘেষা প্রতিষ্ঠান ByteDance। প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিং (Zhang Yiming), যার আয় Twitter, zoom, dropbox, lyft, snapchat, shopify, airbnb, stripe, groupon and spotify সবার মোট আয়ের যোগফল থেকেও বেশী।
কিন্তু এতটা লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে টিকটক? কেনই বা আমেরিকা তা কিনতে চাচ্ছে? চীন সরকারই বা কেন এতটা ক্ষুব্ধ? Bytedance কি শুধুই একটি TikTok প্রতিষ্ঠান? নাকী এর পেছনে রয়েছে আরো বড় কিছু? কে এই Zhang Yiming?
সময়টা ৭০ থেকে ৮০ এর দশক। চীনের মধ্যবিত্ত পরিবারের কৌতুহলী ছেলে ঝাং ইমিং(Zhang Yiming)। মুক্তমনা বাবা মার অনুপ্রেরণায় বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখার প্রতি জেগেছে তার অগাধ ভালোবাসা। চীনও সবে বানিজ্যের সব দরজা জানালা বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাবার তেমনই এক প্রকল্পে জড়িত থাকার সুবাদে খাবারের টেবিলে তাদের গল্পগুলোও থাকে উদ্ভাবন ও প্রযুত্তি পণ্যের নানা খবরে টইটুম্বর।
নানকাই বিশ্ববিদ্যালয়ে (Nankai University) চুপচাপ এই ছেলেটির সময় কাটতে থাকে কম্পিটারের সাথে। কম্পিউটারের নানা পার্টস ও কোডের বিস্ময়কর রহস্যে হারিয়ে যেতে যেতে একসময় পরীক্ষার খাতাতেও পাওয়া যায় তার তুখোড় মেধার পরিচয়। কম্পিউটারের পারদর্শীতায় ক্যাম্পাসে তার দারুন জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রফেসরদেরও নজর এড়ায় না।
২০০৫ সালে গ্র্যাজুয়েশন শেষে একদিন ঝাং ইমিং (Zhang Yiming) একটি ব্যবসায়ের প্রস্তাব পান। প্রস্তাবটি আসে তার এক প্রাক্তন সহপাঠীর কাছ থেকে। ব্যবসাটিতে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পরিচয় সনাক্তকরণ সেবা দিতে চাচ্ছে। আইডিয়াটি তার কাছে চমৎকার লাগলেও ব্যবসাটি মোটেও সফল হল না। তাই তিনি ২০০৬ সালে ব্যবসা ছেড়ে Kusun নামের একটি নব্য প্রতিষ্ঠানে সফটওইয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরী নেন।
Kusun হচ্ছে একটি ভ্রমণ অ্যাপ যা বিমান, হোটেল ও ট্রেনসহ আরো নানা বিষয় বুক করতে ব্যবহৃত হয়। তার এই অ্যাপটি ব্যাপকভাবে সফল হয় যার ফলে ২০০৯ সালে Trip Advisor এবং ২০১৫ সালে Meituan অ্যাপটি কিনে নেয়।
একদিন ঝাং ইমিং (Zhang Yiming) ট্রেন স্টেশনে বসে আছেন। চীনের বসন্ত উৎসবে যেতে ট্রেনের টিকেট পেতেই চলছে দীর্ঘ অপেক্ষা। টিকিট পাওয়াই মুশকিল। নতুন টিকিট এল কিনা জানার একটাই উপায়, “বার বার অ্যাপটি রিফ্রেস করা।”
শেষমেষ বিরক্ত হয়ে তিনি অ্যাপটিতে একটি কোড বসিয়ে দিলেন যেন নতুন টিকিট এলেই তার কাছে একটি মেসেজ চলে আসে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার ফোনে একটি SMS আসে, “নতুন টিকিট পাওয়া যাচ্ছে!!”
Zhang Yiming মুগ্ধ হন। আহা! যার যার দরকারি তথ্যগুলো যদি এভাবেই নিজে নিজে মোবাইলে চলে আসতো! পুরো ব্যাপারটি তার কাছে ভারী চমৎকার লাগে। ধারণাটি মনে গেঁথে নেন তিনি।
কুসুন এ ৫০ জন কর্মচারী সামলানো ও পরবর্তিতে মাইক্রোসফটে (Microsoft) চাকরীর দায়িত্ব তার অভিজ্ঞতার ঝুলিকে অনেকটা সমৃদ্ধ করে। কিন্তু পুরো একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব একা কিভাবে সামলাতে হয় সেটা জানা তার এখনো বাকী। আর তা জানতেই এবার তিনি 99 Fang নামে নিজস্ব একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এটি মূলত একটি Real Estate Search portal যার মাধ্যমে ব্যবহারকারি ভাড়া কিংবা বিক্রয়ের জন্য কাঙ্ক্ষিত সম্পত্তি খুঁজে নিতে পারেন।
যাত্রা শুরু করার ৬ মাসের মাঝেই প্রতিষ্ঠানটি ৬ টি Application তৈরী করে। তাতে ১০ লাখেরও বেশী ব্যবহারকারী আকৃষ্ট হয় এবং তা চীনের ১ নম্বর Real Estate Search portal-এ রুপান্তরিত হয়। আর সফল হওয়ার ২ বছর পর ২০১২ সালে ঝাং ইমিং(Zhang Yiming) এটির CEO পদ থেকে অবসর নেন।
কয় বছর আগে ট্রেনের টিকিটের জন্য প্রতীক্ষা তাকে খুব চমৎকার একটি বিষয় শিখিয়েছিল। জাগিয়েছিল ভালো লাগার এক শিহরণ। এবার সেটা কাজে লাগানোর সময় এসে গেছে।
ByteDance, একটি সদূর প্রসারী স্বপ্নের নাম।
বেইজিং(Beijing)-এর ৩য় রিং রোডের একটি ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট। ৩ বেডরুমে ৩টি বিভাগ। গবেষনা, হিসাব নিকাশ ও অ্যাপ বিভাগ। এটির রান্নাঘরেই কর্মীদের দু’বেলার খাবার তৈরী করা হয়। আর এখানে বসেই ঝাং ইমিং(Zhang Yiming) চিন্তা করেন ByteDance-এ কি কি করা হবে, কিভাবে করা হবে।
৩,০০০ হাজার ডলার ভাড়ার এই বাসাটিতে মাঝে মাঝেই বিদ্যুৎ থাকে না। কিন্তু তারপরও স্বপ্ন থেমে থাকে না। সুবিশাল এক পরিকল্পনার বটবক্ষ হয়ে বিশ্বে ডালপালা মেলার ছবিটা আঁকা হতে থাকে এখান থেকেই।
ফান্ডিং-এর খোজে…
বড় পরিকল্পনাকে রুপ দিতে দরকার বড় ফান্ডিং। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সহজ নয়। ১ মাসে প্রায় ৩০টি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সাথে কথা বলা হল। কেউই রাজি হয় না।
শেষে একটি প্রতিষ্ঠান আশার আলো জ্বালালো। এস আই জি সিসকিয়েনা (SIG -China)। এই প্রতিষ্ঠানটি Bytdance-এ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে। ধীরে ধীরে SoftBank Group, Sequoia Capital, General Atlantic ও TigerGlobal-এর মতো প্রতিষ্ঠানও ফান্ডিং-এ যুক্ত হয়। যারা প্রথম দফায় ফান্ডিং করে নি, পরবর্তীতে তারা রীতিমত আফসোস করে ।
ফান্ড পেয়ে তৈরী হতে থাকে একটির পর একটি অ্যাপ।
ByteDance এর প্রথম অ্যাপ “নেইহান দুয়ানসু”(Nei Han Duan Shu)। তরুণদের পছন্দের কৌতুক ও Meme তে পূর্ণ দারুন এই অ্যাপটি হাসি-আনন্দের খোরাক হয়ে প্রায় ২০ কোটি মানুষ মানুষের জীবনের সাথে মিশে যায়। অ্যাপটি মানুষের এতটাই প্রিয় হয়ে ওঠে যে মেম্বাররা এটির স্টিকার তাদের গাড়ির বাম্পারে সেঁটে দেয়। পরস্পরকে একটি সাংকেতিক হর্ণ বাজিয়ে সৌহার্দ্য জানায়।
ByteDance-এর আরেকটি অ্যাপ টো-টিয়াও (Toutiao)। এটি একটি খবরের অ্যাপ। খবরকে ক্ষুদে আকারে সহজ ভাষায় আগ্রহীদের সামনে উপস্থাপন করে। দেখতে দেখতে এটির ব্যবহারী ২০ কোটিকেও ছাড়িয়ে যায়।
তাদের সি-কুয়া (CKUA) অথবা watermelon ভিডিও, একটি YouTube-এর মতোই ভিডিও প্লাটফর্ম। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও থেকে শুরু করে, এখন সিনেমাও সাপোর্ট করে। BBC Studio-র সাথে ডকুমেন্টারীর জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় এই প্লাটফর্মের ব্যবহারকারী প্রায় ৩০ কোটির কাছাকাছি পৌছে যায়।
ইন্ডিয়াতে Hello, জাপান ও সিঙ্গাপুরে Lark, ইন্দোনেশিয়াতে Babe সহ বিভিন্ন দেশে Bytedance-এর অ্যাপগুলো জনপ্রিয়তা পেয়ে চলেছে।
তবে ByteDance-এর যুগান্ত সৃষ্টিকারী একটি অ্যাপের কথা একটু আলাদা করেই বলতে হয় যার নাম TikTok. বিশ্বজুড়ে যার ব্যবহারীর সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশী।
TikTok মোবাইল দিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও তৈরী করার এক অনন্য অ্যাপ, যেখানে একজন ব্যবহারকারী সহজেই ৩ থেকে ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও তৈরী করে মানুষের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়ার সুযোগ পায়। অনেক Content Creator-এর আয়ের একমাত্র উৎসই হল TikTok। ২০২২ সালে এটি ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে যা প্রতি বছর শত ভাগ হারে বাড়ছে । ২০২৩ সালে এটির ব্র্যান্ড ভ্যাল্যু হয়ে দাঁড়ায় ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
এ সবগুলো অ্যাপ একটি মাত্র সূত্রের উপর কাজ করে, আর তা হল AI বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ব্যবহারীদের ফোনে যার যার নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী সহজ ভাষায় অল্প সময়ের কনটেন্ট পৌছে দেওয়া।
বলা হয়ে থাকে, Baidu, Alibaba ও Tencent সম্মিলিতভাবে BAT নামে পরিচত- যাদের যে কোন একটির ফান্ডিং ছাড়া চীনে কোনো নব্য প্রতিষ্ঠান মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।
কিন্তু Bytedance এক মাত্র প্রতিষ্ঠান যে কিনা এই নিয়ম ভেঙ্গে বের হতে পেরেছে।
সবগুলো গ্রুপ মিলিয়ে ২০২৩ সালে ByteDance-এর মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ২২০ বিলিয়ন ডলার। বাৎসরিক লাভ ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বজুড়ে রয়েছে ১ লাখেরও বেশি কর্মচারী ও ৩৬টিরও বেশি অফিস।
চড়াই উতরাই এবং একের পর এক ধাক্কা
১০ বছরের এই যাত্রায় Bytedance- কে পার করতে হয় অনেক কিছুই। বেশ কয়েকটি news portal তার উপর কপিরাইট মামলা করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল Soho ওয়েবসাইটের মামলা, যারা দাবী করে বসে Bytedance তাদের কন্টেন্টগুলো ব্যবহার করছে যার কারনে তাদের ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিক কমে যাচ্ছে, এবং লোকসান গুনতে হচ্ছে।
Bytedance এরপর তার অ্যাপের কনটেন্টগুলোতে তাদের মূল পেইজের লিঙ্ক যুক্ত করে দেয়, যা মূল পোস্ট দাতাদের ট্রাফিক কমানোর পরিবর্তে বাড়াতে সাহায্য করে এবং সমস্যাটির চমৎকার সমাধান হয়।
২০১৮ সালে একদিন কিছু ব্যবহারকারী “নেইহান দুয়ানসু” (Nei Han Duan Shu) অ্যাপটিতে অশোভনীয় কিছু লাইভ ভিডিও পোস্ট করে। আর সাথে সাথেই চীন সরকার অ্যাপটি বন্ধ করার ঘোষনা দেয়। এত বছরের পরিশ্রম মুহুর্তেই বৃথা হয়ে যায়। নিষিদ্ধ হয়ে যায় ByteDance- এর প্রথম অ্যাপ “নেইহান দুয়ানসু”।
এর পরেই চীনের সড়কে তরুনদের ঢল নেমে যায়। তারা গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে সরকারী অফিসের সামনে তাদের গাড়িগুলো পার্ক করে, গান, স্লোগান, আলোর মিছিল ও হর্ণ বাজিয়ে অবরোধ গড়ে তোলে।
টিভি, রেডিও ও সরকারের মিডিয়া প্রশাসন থেকে ByteDance কাছে তার সবগুলো প্লাটফর্মের কনটেন্টের মান সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সতর্কবার্তা আসে।
অন্যান্য দেশে ফেসবুক কিংবা এ ধরণের প্লাটফর্মে পোস্টদাতা যদি কোনো পোস্ট করে সেটার দায় শুধুমাত্র পোস্টদাতার উপরেই বর্তায়। কিন্তু চীনে বিষয়টি একটু ভিন্ন রকম। এখানে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কন্টেন্টগুলোর জন্য পোস্ট দাতা যেমন দায়ী, একইভাবে প্লাটফর্মগুলোও পোস্ট নিয়ন্ত্রণ না করার জন্য দায়ী থাকে।
সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনায় Zhang প্রকাশ্যে এসে ক্ষমা চায় এবং সরকারের নীতি অনুযায়ী মান নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দেয়।
২০১৯ সালে TikTok-এর বিরুদ্ধে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া ১৩ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ই-মেইল অ্যাড্রেস ও ফোন নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ আসে। শিশুদের তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে না পারার জন্য আমেরিকার সরকার TikTok-কে ৫মিলিয়নেরও বেশি US dollar জরিমানা করে।
TikTok তার ব্যবসা চীনে পরিচালনা না করলেও চীনের সরকার TikTok সহ তাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য তাদের নিজস্ব সফটওয়্যারের সাথে যুক্ত করার অধিকার রাখে। যার কারণে ২০২০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে TikTok কে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয় যদি না সে একটি আমেরিকান প্রতিষ্ঠানের কাছে অ্যাপটি বিক্রি করে দেয়। ওদিকে চীনের সরকার যে এমন লেনদেনের বিপক্ষে তার একটা পূর্বাভাস দিয়ে দেয়।
ওয়ালমার্ট (Walmart) ও ওরাকল (Oracle) প্রতিষ্ঠানের কাছে যখন TikTok-কে বিক্রি করে দেওয়ার কথা চলছিল, ঠিক তখনই চীন সরকার তাদের রপ্তানী আইনে কিছু সংযোজন নিয়ে আসে যার মধ্যে ByteDance ও অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। এক দিকে তার প্রতিষ্ঠানকে আরো বড় করার আকাংক্ষা, অন্যদিকে দেশে তার সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার ঝুঁকি। সবমিলিয়ে পরিস্থিতিটা ঝাং(Zhang)-এর জন্য বেশ অস্বস্তিকর। ২০২৩ সালে বাইডেন (Joe Biden) প্রশাসনের দাবির মুখে ঝাং(Zhang) TikTok অ্যাপটি ওয়ালমার্ট ও ওরাকলের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।
এতকিছু সত্ত্বেও Zhang Yiming উদ্যোক্তাদের জন্য আজ অনুপ্রেরনার উৎস। Bloomberg অনুযায়ী ২০২৩ সালে Zhang Yiming- এর মূল্য ৪২ বিলিয়ন ডলার। এবং Forbe অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় তার অবস্থান ২৩ তম।
মাত্র ১০ বছরে ২২০ বিলিয়ন ডলারের সফল ব্যবসা দাঁড় করানোর ক্ষেত্রে Zhang ৩টি বিষয় খুব গুরুত্বের সাথে দেখেন।
১। একটি হচ্ছে নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারণা থাকা
২। প্রতিনিয়ত শেখা ও উদ্ভাবনের ক্ষমতা থাকা এবং
৩। বিনীত কিন্তু সাহসী কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া।
Zhang Yiming এখনও বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত শিখে চলেছেন। শেখার তালিকায় রয়েছে স্টিভ জবস (Steve Jobs), মার্কজুকার বার্গ (Mark Zuckerberg) সহ আরো অনেক সফল উদ্যোক্তা। তার মতে প্রতিনিয়ত উদ্ভাবণ করতে পারা প্রযুক্তি শিল্পে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এবং এই মুহুর্তে AI কিংবা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ঘিরেই তাদের উদ্ভাবনকে চালিয়ে যেতে হবে।
তার ভাষ্যমতে, একজন প্রোগ্রামার থেকে ক্যারিয়ার শুরু করে এক যুগ সমান ব্যবসার অভিজ্ঞতা তাকে কয়েকটি জিনিস শিখিয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিনীত থাকার গুরুত্ব। তিনি বলেন, বিনয় মানুষকে দীর্ঘমেয়াদী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তিনি নিশ্চিত করেন যে অন্যান্য ম্যানেজাররাও যেন একি ভাবে বিনয়ী থাকেন।
Zhang তার অফিসে পদমর্যাদা অনুযায়ী সম্মোধনের চল বারণ করে দিয়েছেন। এমনকি সেখানে ম্যানেজমেন্টের স্তরও খুব একটা নেই। যার ফলে সবাই সবার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পারে। Bytedance এর ম্যানেজমেন্টে মাত্র ৪ টি স্তর আছে যেখানে আলিবাবার ১৪টি স্তর রয়েছে । চীন দেশের প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজমেন্টের এত কম স্তর থাকা খুবই বিরল ব্যাপার। কারণ চীনের সংস্কৃতিতে পদ মযার্দাকে খুব বড় করে দেখা হয়।
কিন্তু Zhang অন্য ধাঁচের মানুষ। ছোটবেলা থেকেই তিনি সমাজের গৎবাধা জীবনের বাইরে এসে মুক্তভাবে চিন্তা করতে অভ্যস্ত। এসব কিছুতে সাহসটাও প্রয়োজন। তাই সবসময়ই তিনি এমন মেধার সন্ধানে থাকেন যাদের ঝুঁকি নেওয়ার সাহস এবং বাধা অতিক্রম করে দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা দু’টোই আছে।
সাফল্যকে এত কাছ থেকে দেখার পরও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের রাজনৈতিক চাপের কারণে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যত আজ অনিশ্চিত। কি মনে হয়? কি হতে চলেছে ByteDance- এর সাথে? বাকী অ্যাপগুলোও কি একে একে বন্ধ হয়ে যাবে? কমেন্টে আমাদের অবশ্যই জানান। ব্লগটি ভাল লেগে থাকলে লাইক এবং সাবস্ক্রাইব করুন নিউজলেটার ।